যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর গত বুধবার থেকে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। উগ্র ডানপন্থিদের কয়েক দিনের সহিংসতার বিরোধিতা করে এদিন হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লন্ডনে কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া উগ্র ডানপন্থিদের সম্ভাব্য হামলা সামলানোর জন্য ১ হাজার ৩০০ বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসেবে রাখা হয়েছে। খবর বিবিসির।
গত ২৯ জুলাই তিন শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় গুজবকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ইংল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে মসজিদ ও অভিবাসীদের সহায়তাকেন্দ্রে হামলা হয়। এর বিরোধিতা করে বুধবার সন্ধ্যায় বিপুলসংখ্যক বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভকারী লন্ডন, বার্মিংহাম, ব্রিস্টল, লিভারপুল ও নিউক্যাসলের রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। ছুরি হামলায় ওই শিশুদের নিহত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে, হামলাকারী একজন মুসলিম অভিবাসনপ্রত্যাশী। পরে জানা যায়, সন্দেহভাজন হামলাকারী ১৭ বছরের কিশোর অ্যাক্সেল রুডাকুবানা। ওয়েলসে তার জন্ম। তার মা-বাবা রুয়ান্ডা থেকে এসেছেন।
অনলাইনের পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, ডানপন্থি, মুসলিমবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বুধবার তালিকা ধরে ধরে অভিবাসন কেন্দ্র, অভিবাসী সহায়তা কেন্দ্র ও বিশেষায়িত আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাতে পারে। এ খবর ছড়ানোর পর বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অনেকে দোকানের জানালা বোর্ড দিয়ে ঢেকে দেয়। তবে এ খবরের পর লন্ডন, ব্রিস্টল, বার্মিংহাম, লিভারপুল ও হেস্টিংস শহরের রাস্তায় হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উগ্র ডানপন্থিদের এসব তৎপরতার প্রতিবাদে পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লন্ডনের ওয়ালথামস্টোতে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের হাতে ছিল পোস্টার, সেখানে বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাড়াও অভিবাসী, শরণার্থী ও যারা আশ্রয় নিতে চান, তাদের স্বাগত জানানোর কথাও বলা হয়েছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘কাদের সড়ক? আমাদের সড়ক!’ কয়েকজনের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল ‘উগ্র ডানপন্থিদের থামাও’।
উগ্র ডানপন্থিদের ইঙ্গিত করে ৫৮ বছর বয়সী সারা ট্রেসিলিয়ান এএফপিকে বলেন, ‘আমি বরোতে থাকি এবং আমি চাই না এসব মানুষ আমাদের রাস্তায় থাকুক। তারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।’ শেফিল্ডে অধিকারকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘জোরালোভাবে বলুন, স্পষ্টভাবে বলুন, শরণার্থীদের এখানে স্বাগত জানানো হচ্ছে।’
উত্তর লন্ডনে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ৬৪ বছর বয়সী স্টেটসন ম্যাথিউ বলেন, জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে দেশকে প্রান্তে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হেস্টিংসে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়া এক নারী জানান, বিক্ষোভে এতে মানুষ যোগ দিয়েছে দেখে তিনি মুক্ত বোধ করছেন।
মেট্রোপলিটান পুলিশ জানিয়েছে, লন্ডনে কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া, সম্ভাব্য হামলা সামলানোর জন্য এক হাজার তিনশ বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসেবে রাখা হয়েছে। লন্ডন ছাড়াও বার্মিংহাম, লিভারপুল, শেফিল্ড, ব্রিস্টলেও প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল করেন। মিছিলকে ঘিরে পূর্ব লন্ডনের একটি অভিবাসন কেন্দ্রর সামনে প্রচুর মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। সেখানে ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। এ ছাড়াও মানুষ সোচ্চারে বলেন, ‘অভিবাসন কোনো অপরাধ নয়’, ‘অতি ডানপন্থিদের থামানো হোক’।
পুলিশের তথ্য অনুসারে, বার্মিংহামে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি সহায়তাকেন্দ্রে বর্ণবাদবিরোধী শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন। আর ব্রাইটনে প্রায় দুই হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যোগ দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেত্তে কুপার স্থানীয় মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন, যে দাঙ্গা হয়েছে তা সরকারের অভিবাসন নীতির জন্য নয়, এটা অতি ডানপন্থিদের গুন্ডামির জন্য হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: