যুক্তরাজ্যে চলতি সপ্তাহে এক নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠানে অবৈধ অভিবাসী মোকাবেলা নিয়ে কথা বলার সময় বাংলাদেশের উদাহরণ দেন বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্য থেকে ‘অবৈধ’ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে দলীয় নেতা কিয়ার স্টারমারের মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ‘অপব্যাখ্যা’ বলে অভিহিত করেছে লেবার পার্টি।
এ সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে ‘ডেইলি সান’ পত্রিকা আয়োজিত এক নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠানে ‘অযাচিতভাবে’ বাংলাদেশের নাম টেনে আনেন বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা স্টারমার। মানবপাচার, চোরাচালান নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া এবং ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢল ঠেকাতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ (টোরি) পার্টির ব্যয়বহুল রুয়ান্ডা পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন স্টারমার।
রুয়ান্ডা পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া অনিয়মিত অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনর্বাসনের জন্য পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় স্থানান্তরিত করারকথা বলা হয়েছে৷ এজন্য রুয়ান্ডাকে কোটি কোটি ডলারও দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় গেলে টোরিদের এই পরিকল্পনা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কিন্তু তাহলে লেবার পার্টি কীভাবে অবৈধ অভিবাসীদের মোকাবেলা করবে? তাদের পরিকল্পনার আওতায় অভিবাসীদেরই বা কোথায় পাঠানো হবে? সে প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে স্টারমার বলেন, ক্ষমতায় গেলে তার সরকার অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে, সে দেশেই তাদেরকে ফেরত পাঠাবে।
আর এ সময়ই তিনি বাংলাদেশের উদাহরণ দেন।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, স্টারমারের এই মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, স্টারমার বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়া মানুষদের নিয়ে কথা বলছেন। যদিও তাকে স্পষ্টভাবে বিশেষত যুক্তরাজ্যে থাকা বৈধ কাগজপত্রহীন মানুষদের কথা উল্লেখ করতে দেখা যায়নি।
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা মানুষজনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ বর্তমান সরকার তেমন কোনও ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারেনি।”
“অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমে গেছে। সুতরাং লেবার সরকারের প্রথম কয়েক দিনে আমি কি করব তা বলছি, আমি তাদেরকে (অভিবাসী) ফিরতি বিমানে তুলে দেব, রুয়ান্ডায় পাঠাব না। কারণ, সেটি ব্যয়বহুল। আর সেই ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের থাকার বিষয়টিও আমি নিশ্চিত করব।”
এমন বক্তব্যের পর স্টারমার নিজ দলেই সমালোচনার মুখে পড়েন। তার বক্তব্যের এই ভিডিও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে থাকতে পারে এমন উদ্বেগের মাঝে লেবার পার্টি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে।
লেবার বলছে, সম্পাদনা করা স্টারমারের এই ভিডিও ক্লিপ ‘বিভ্রান্তিকর’। দলটির এক মুখপাত্র বলেছেন, “কিয়ার স্টারমার যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে গর্বের সঙ্গেই সমর্থন দিয়েছেন। এই বাংলাদেশিরা আমাদের দেশে বিপুল অবদান রেখেছে। কিন্তু ভিডিও ক্লিপটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে স্টারমার ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলছেন। এটি অপব্যাখ্যা।
“আসলে তিনি লেবার পার্টির দীর্ঘদিনের নীতির কথাই উল্লেখ করেছেন। আর তা হচ্ছে, সেইসব মানুষকে ফেরত পাঠানো যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার আইনি অধিকার নেই। বাংলাদেশের কথা কেবল একটি উদাহরণ হিসাবে বলা হয়েছে। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে।”
আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে, এমন বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ব্রিটিশ সরকার। গত মে মাসে লন্ডনে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তিটি হয়। যুক্তরাজ্যে থাকার কোনও অধিকার নেই এমন অভিবাসীদের দ্রুত বের করে দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করা হয়েছে এ চুক্তির আওতায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: