আফগানিস্তানের মূল্যবান খনিজের লোভে তালেবান সরকারের সাথে চীনের সখ্যতা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৬ জুন ২০২৪ ০৯:৫২

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীকে হটিয়ে ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবানের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোটা বিশ্ব থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আফগানিস্তান। ক্ষমতার পালাবদলের তিন বছর পার হলেও এখনো কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি বর্তমান প্রশাসনকে। তবে এমন ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পরাশক্তি চীন। বলা হচ্ছে, আফগান মাটিতে থাকা বিপুল খনিজের লোভেই তালেবান সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে চাইছে বেইজিং।

তুর্কি সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের মাটির নিচে লুকিয়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ লিথিয়াম। ইউএস ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তথা নাসার পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে অব্যবহৃত লিথিয়াম খনিগুলোর মূল্য আনুমানিক এক লাখ কোটি ডলার। যার ফলে শিগগিরই এই খনিজ নিয়ে বলিভিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে আফগানিস্তান।

আফগানিস্তানের হেরাত থেকে নুরিস্তান প্রদেশ পর্যন্ত লিথিয়াম খনি আছে বলে জানা যায়। যার দৈর্ঘ্য ৮৫০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। ধারণা করা হচ্ছে, এসব খনির জীবনকাল প্রায় ৭০ বছর। ৮০-র দশকে সোভিয়েত খনি বিশেষজ্ঞরা প্রথম এসব খনিজ আবিষ্কার করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিকদের একটি দল বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে।

আফগান সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে লিথিয়ামের বিপুল মজুত এবং ওয়াখান সীমান্ত দিয়ে চীনে সহজে যাতায়াতের সুযোগের কারণে আফগানিস্তানের প্রতি চীনের ব্যাপক আগ্রহ জন্মেছে।

আফগান গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, চীনের গোচিন কোম্পানি প্রাথমিক পর্যায়ে আফগানিস্তানের লিথিয়াম খনিতে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাতে ব্যবসা ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আনুমানিক ৫০০ চীনা ব্যবসায়ী আফগানিস্তান সফর করেছেন। মূলত আফগান প্রাকৃতিক সম্পদ পরখ করে দেখাই তাদের ওই সফরের উদ্দেশ্য ছিল। বেশির ভাগ চীনা কোম্পানি ও তাদের বিনিয়োগ খনি ও খনিজ উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে। বর্তমানে ২০টির বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তানে কাজ করছে এবং শতাধিক চীনা কোম্পানি দেশটির খনিতে কাজ করার জন্য আফগানিস্তানের খনি মন্ত্রণালয়ে তাদের নাম নিবন্ধন করেছে।

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যম পেন্টাগন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছিল, আফগানিস্তানে যে বিপুল পরিমাণ লিথিয়াম আছে, সেই কারণে দেশটি ‘লিথিয়ামের সৌদি আরব’ হয়ে যাবে। ফলে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী প্রত্যাহারের পরই দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে চীন। যার মধ্য দিয়ে বেইজিং তার কৌশলগত স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: