৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের নতুন ত্রুটি জানাল বোয়িং

মুনা নিউজডেস্ক | ১৫ জুন ২০২৪ ১৭:১৫

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

 

সময়টা ভালো যাচ্ছে না বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার নিয়ে বিভিন্ন হুইসেলব্লোয়ার ও সাবেক প্রকৌশলীদের নানা যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ ও কয়েকটি দুর্ঘটনা বেশ বিপাকে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটিকে। অনেক বিমান পরিবহণ সংস্থাই বোয়িংয়ের বিকল্প খুঁজছে। এবার বোয়িং জানাল নতুন আরেক সমস্যার কথা।

গত বৃহস্পতিবার বোয়িং জানায়, ডেলিভারির অপেক্ষমাণ তাদের কিছু ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানে ভুল তরিকায় ফিউসেলেজ বসানো হয়েছে, ত্রুটিযুক্ত বিমানগুলোতে এজন্য তারা আবার পরীক্ষা চালাবে।


প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যে জেটগুলোর এখনও ডেলিভারি দেয়া হয়নি, শুধু সেগুলোতেই সমস্যা আছে। বর্তমানে সেবায় নিয়োজিত ড্রিমলাইনারগুলো পরিচালনার জন্য পুরোপুরি নিরাপদ। তবে তারপরও যেসব বিমান চালু আছে সেগুলোতে কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে কিনা তা এখনও যাচাইবাছাই করছে তারা।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশন (এফএএ) প্রধান মাইকেল হুইটেকারে বোয়িংয়ের দক্ষিণ ক্যারোলিনার বোয়িং ৭৮৭ কারখানা পরিদর্শনের ঠিক আগেই এই ঘোষণা এলো।


এর আগে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৯ বিমানের দরজার প্যানেল মাঝ আকাশে খুলে পড়লে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয় । ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স নাইনের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ইউএস ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের একটি প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, যে চারটি বোল্ট বিমানের দরজাকে নিরাপদে সংযুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয় সেগুলো ঠিকমতো না লাগানোর জন্য এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনার জন্য বোয়িংকে ফৌজদারি তদন্তের পাশাপাশি বিমানে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

হুইটেকার ওই ঘটনার পরে পরিদর্শনের জন্য আলাস্কা এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ ম্যাক্স-৯ বিমান উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। সিনেটের শুনানিতে তিনি বলেন, এফএএ বোয়িংয়ের প্রতি খুবই নমনীয় ছিল সবসময়, তাদের আরও কঠোর হওয়া দরকার। তদন্ত ও পরিদর্শন প্রক্রিয়ার পর আবার প্রায় তিন সপ্তাহ পর ওড়ার অনুমতি পায় বোয়িং এ সংস্করণের বিমানটি।

সিনেটর টেড ক্রুজ বলেন, 'এফএএকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে বিমানগুলো শুধু নিরাপদে ডিজাইন করা নয়, বরং নিরাপত্তা মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে, যা বোয়িংয়ে ঘটছে না।'

বোয়িং দ্বারা চিহ্নিত ত্রুটিগুলো সমাধান করার জন্য এফএএর কাছে একটি পরিকল্পনা জমা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে বৃহস্পতিবারের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভিড ক্যালহাউন আগামী সপ্তাহে সিনেটের তদন্ত বিষয়ক স্থায়ী উপকমিটির সামনে সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বোয়িং জানায়, তারা তাদের ৭৮৭ উড়োজাহাজের মান পরীক্ষার সময় কিছু ফাস্টেনারে সমস্যা খুঁজে পেয়েছে। কিছু ফাস্টেনার সঠিকভাবে বসানো হয়নি এবং সেগুলো ঠিক করা প্রয়োজন কিনা তা নিয়ে এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে তারা। বিষয়টি প্রথম সংবাদমাধ্যমে রয়টার্স প্রকাশ্যে আনে।

বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'ডেলিভারির আগে সব উড়োজাহাজ আমাদের ডেলিভারি স্ট্যান্ডার্ড পূরণ করছে কিনা তা সময় নিয়ে নিশ্চিত করছি আমরা। আমরা আমাদের গ্রাহক এবং এফএএ-এর সঙ্গে একসাথে কাজ করছি এবং তাদের নিয়মিত হাল নাগাদ করছি।'

নতুন এ সমস্যার পর ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও শঙ্কা দেখা দিল। এর আগে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের সব বিমানে গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন বোয়িংয়ের সাবেক কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার স্যাম সালেহপৌর।

মার্কিন গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যাম বলেন, এই ত্রুটি ঠিক করা না হলে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের উড়োজাহাজ হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে মাঝপথেই 'ভূপাতিত' হয়ে যেতে পারে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ৭৮৭ ও ৭৭৭ মডেলের জেট তৈরি করতে 'শর্টকাট' পথ বেছে নিয়েছে বোয়িং। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর তাকে 'চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়' বলে দাবি করেন স্যাম। তবে বোয়িং বলেছে, এই প্রকৌশলীর দাবিটি 'ভুল' এবং তারা আত্মবিশ্বাসী যে তাদের বিমান নিরাপদ।

পাঁচ বছর আগে বোয়িং তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হয়েছিল যখন দুটো নতুন ৭৩৭ বোয়িং ম্যাক্স বিমান প্রায় একই ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং তাতে ৩৪৬ জন নিহত হন।

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছিল, ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট কন্ট্রোল সফটওয়্যার যার বিবরণ নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল বোয়িংকে।

শুরুতে প্রতারণার অভিযোগ স্বীকার করে বোয়িং এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে সম্মত হলেও পরবর্তীতে আদালতের শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিল। যাত্রীদের জীবনের থেকে আর্থিক লাভকে বেশী প্রাধান্য দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি অনেক অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছিল।

গত মাসে এফএএ জানায়, বোয়িং কর্মীরা নির্দিষ্ট কিছু ৭৮৭ উড়োজাহাজের মান পরীক্ষার সময় গাফিলতি করেছেন কিনা এবং মানদণ্ড পূরণের মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

কড়া সমালোচনা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার আতশকাচের নিচে আসার পর বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ ক্যালহান চলতি বছরের শেষের দিকে পদত্যাগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: