গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এমনকি গাজায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এতসবের পরও গাজায় ইসরায়েলেকে থামানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধ কখন শেষ হবে তা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। শনিবার (০১ জুন) আন্তর্জাতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধ থামানোর জন্য ইসরায়েলের যে শর্ত রয়েছে তা পরিবর্তন হয়নি। এসব শর্ত হলো হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো ধ্বংস করা, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা আবারও ইসরায়েলের জন্য যাতে হুমকি না হয়ে দাঁড়ায় সেটি নিশ্চিত করা।
এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্টভাবে একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৩ স্তরের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের এ প্রস্তাবে ইসরায়েল সম্মত হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া নতুন এই প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জো বাইডেন বলেছেন, ‘এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে’।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে এক ভাষণে নতুন এ প্রস্তাব তুলে ধরেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিন স্তরের নতুন এ প্রস্তাবে গাজায় পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সুযোগ রয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
হামাসের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, ‘হামাস সবসময় বলে থাকে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। এখন হামাসের সামনে প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে, তারা আসলেই এটা চায় কি না’।
নতুন প্রস্তাবে যা আছে
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন পর্বের এ প্রস্তাবের শুরুতে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বিরতির কথা বলেছে ইসরায়েল। এটি হবে যুদ্ধ বিরতির প্রথম পর্যায়। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক’ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং আহত জিম্মিরা থাকবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা কয়েকশ মানুষকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।
গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গাজায় প্রতিদিন মানবিক সহায়তাবাহী ৬০০ ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।
ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাদবাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে জিম্মি পুরুষ সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে জিম্মি ফেরানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করা হবে। গাজার জন্য বড় ধরনের একটি ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: