এক সময় ইসরায়েলের অন্যতম মিত্র দেশ ছিল তুরস্ক। মুসলিম বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় দেশটি। তবে এই দহরম-মহরম সম্পর্ক বেশ দিন ঠেকেনি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দশকে দুই দেশের সম্পর্ক অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়েছে। এরপর গত বছর গাজা যুদ্ধ শুরু হলে এই তিক্ততা আরও বাড়ে। এই বৈরিতা এতই চরম আকার ধারণ করে যে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তা ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে। চলতি মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা স্থগিত করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এসবের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর ব্যবসা-বাণিজ্য লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। ২৮ মে, মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত কয়েক দশকে তুরস্ক ও ইসরায়েলের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। তবে সব কিছুই সামলে নেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গাজা যুদ্ধ ঘিরে এখন যে ফাটল তৈরি হয়েছে তা আর সামাল দিতে পারবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ইসরায়েলিরা।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক প্রাণহানির প্রতিবাদে চলতি মে মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবস্য বন্ধ করে তুরস্ক। এই যুদ্ধ শুরুর পর তুরস্কই একমাত্র দেশ যারা ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছেদ করেছে। এমনকি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পর্ক পুনরায় সচল না করার হুমকি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসেডন্ট এরদোয়ান। তবে ইসরায়েলের দাবি, তুরস্কের এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
তুরস্ক থেকে এতদিন সস্তায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করছিল ইসরায়েল। এসব পণ্যের মধ্যে সিমেন্ট থেকে শুরু করে খাদ্য ও গাড়ি পর্যন্ত ছিল। তুর্কি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বল্প মেয়াদে ইসরায়েলি অর্থনীতিতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে না দেশটি। যদিও তুরস্কের সিদ্ধান্তের পরই আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করে দিয়েছেন ইসরায়েলি ব্যবসায়ীরা।
২০২৩ সালে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে ৬২০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি ২০২২ সালের তুলনায় ২৩ শতাংশ কম। আর চলতি বছরের মে মাসের আগ পর্যন্ত কী পরিমাণ বাণিজ্য হয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি রয়টার্স।
তুরস্ক থেকে মোট সিমেন্টের ৪০ শতাংশ আমদানি করে ইসরায়েল। এমনটাই জানিয়েছেন ইসরায়েল বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শেই পজনার। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা এখন ইউরোপীয় সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকছে। তবে এ ক্ষেত্রে তুরস্কের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ গুণতে হবে। এটা একটা সমস্যা। তবে ইসরায়েলি অর্থনীতিতে বিপর্যয় বয়ে আনবে না।
ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ শমুয়েল আব্রামজন বলেছেন, ইসরায়েলের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার হলো তুরস্ক। তবে আমরা তুরস্কের ওপর একচেটিয়াভাবে নির্ভর করি না। বিকল্প কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করলে খরচ কিছুটা বেশি হবে। তবে তুরস্কের পদক্ষেপের কারণে ইসরায়েলি অর্থনীতিতে বড় বা অব্যাহত আঘাত আসবে না।
এদিকে ইসরায়েলি বাণিজ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তুরস্কের সিদ্ধান্তের জেরে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করতে চাইছে গ্রিস, ইতালি ও অন্যান্য দেশ। ইতিমধ্যে এমন কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েল চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে এখানে বড় একটি সমস্যা আছে। দেড়শ কোটি ডলারের ইসরায়েলি রপ্তানি পণ্যের বাজার খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হবে।
নেতানিয়াহু সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রশাসন বিভাগের প্রধান রয় ফিশার বলেন, আমি মনে করি না যে আমাদের অর্থনীতির এমন একটি দেশের ওপর নির্ভর করা উচিত যেটি একদিন বলে ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাই’। আবার আরেক দিন বলে যে ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাই না’।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য নির্ভরযোগ্য ও টেকসই হওয়া উচিত ...। তাই দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরযোগ্য উৎস খুঁজে বের করাই আমাদের লক্ষ্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: