যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক চলতি বছরের ৪ জুলাই দেশটির নতুন সাধারণ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (২২ মে) দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে দাড়িয়ে এক মৌখিক বিবৃতিতে হুট করেই এই তারিখ ঘোষণা করেন সুনাক।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কার্যক্রম বন্ধ হবে ও শুক্রবার স্থগিত হবে। তারপর শুরু হবে পাঁচ সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণা।
অনেকে ধারণা করেছিলেন, চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে নির্বাচন হতে পারে। বুধবার সকালে যখন যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় তখনি নির্বাচনের তারিখ নিয়ে শুরু হয়। তবে হাউজ অব কমন্সে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের সময়েও বোঝা যায়নি যে সুনাক এত দ্রুত তারিখ ঘোষণা করবেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সুনাক এমন সময় এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন, যখন জনমত জরিপে তার দল কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থান সবচেয়ে নিম্নমুখী। বিরোধী লেবার পার্টি তাদের চেয়ে একুশ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে।
এদিকে, সুনাকের এই ঘোষণায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন তার নিজ দলের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য (এমপি)। বিবিসিকে এক এমপি বলেন, অর্থনীতির অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় কেন আরও বেশি সময় নেওয়া হলো না, তা আমি বুঝতে পারছি না।
এক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বলেছে, সুনাকের এই ঘোষণায় লেবার পার্টি খুশি হতে পারি, আমরা নয়। আরও সময় নেওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।
এদিকে, সুনাকের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা নেতা কেইর স্টারমার। তিনি বলেছেন, টোরিদের (কনজারভেটিভ পার্টির আরেক নাম) নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পাওয়ার এটাই সময়। তারা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে, অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। আসন্ন নির্বাচন আমাদের কাছে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বড় সুযোগ।
তিনি আরও বলেন, টোরিদের আরও পাঁচ বছর সময় দিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। যুক্তরাজ্য তাদের চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে। আর জাতীয় জনমতগুলোতে লেবার পার্টি বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। তাই আমরা পূর্ণ প্রচারণায় নামতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে, সুনাক বলেছেন,আমরা মূল্যস্ফীতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে ও মন্দা থেকে উত্তরণে সফল হয়েছি। এগুলো প্রমাণ করে যে, কনজারভেটিভ সরকার যেসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, সেগুলো ঠিক মতো কাজ করেছে। আগামীতে দেশের মানুষ অবশ্যই আমাদের সমর্থন করবে ও আমরা প্রতিটি ভোটের জন্য লড়বো।
রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের অক্টোবরে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের সমর্থনে দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুনাক। অবশ্য এর আগে ‘মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে’ প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়া বরিস জনসনের কাছে নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন সুনাক।
কিন্তু বরিসকে হারিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির যে নেতা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর আবারও নেতৃত্বের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে দলের নেতা ও পরে প্রধানমন্ত্রী হন ঋষি সুনাক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: