বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চললেও ইসরায়েলিরা মনে করে, গাজায় হামলা চালানোর পদক্ষেপটি সঠিক ছিল। কারণ এটি ছাড়া হামাসকে দমন করা সম্ভব নয়। তবে তারাই বিশেষ করে ইসরায়েলি সেনাদের পরিবারের সদস্যরা মনে করে, রাফাতে অভিযান চালানো ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ভালো কিছু হবে না। বরং এটি তাদের জন্য একটি মৃত্যুফাঁদ। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
গত সাত মাস ধরে গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা চালালেও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনী কোনো অভিযান চালাবে না বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তারা রাফায় হামলা চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, রাফায় অভিযান না চালালে হামাসের বিরুদ্ধে হামলা পূর্ণতা পাবে না। এতে হামাস আবার শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাবে।
এদিকে রাফাতে অভিযান চালানোর কথা প্রকাশ হতেই দুই দফায় নয় শতাধিক ইসরায়েল সেনার বাবা-মায়েরা দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে তারা রাফাকে তাদের সন্তানদের জন্য ‘মৃত্যুফাঁদ’ আখ্যায়িত করে সেখানে অভিযান না চালাতে অনুরোধ করেন।
গত ২ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাফাতে হামলার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসা হচ্ছিল। ফলে প্রতিপক্ষ এর মধ্যেই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের হামলার অপেক্ষা করছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভিকে সম্বোধন করে লেখা ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রায় ৬০০ সৈন্যের বাবা-মা। পরে আরও ৩০০ সৈন্যের বাবা-মা এতে স্বাক্ষর করেন।
চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করে আমাদের সন্তানেরা শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই ক্লান্ত। আর এখন তাদের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। এটা অদূরদর্শিতা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর এক সেনাসদস্যের মা আনাত বলেন, রাফা এখন একটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কারণ আমাদের সৈন্যদের হত্যার জন্য প্রস্তুত হতে অনেক সময় পেয়েছে হামাস। আমরা পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাই প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে আমরা কিছু কিছু এলাকায় আমাদের এ আশঙ্কাকে সত্যি হতে দেখেছি।
আনাত নামের ওই নারী আরও বলেন, এর আগে যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোতে আমরা পুরো অভিযানকেই সমর্থন দিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি, গাজায় যুদ্ধ করা ছাড়া হামাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আর কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে আমরা বুঝতে পারছি, আইডিএফের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব ও মধ্য রাফা খালি করে দেওয়ার সতর্কবার্তা জারি করেছিল। তাদের সেই সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দা রাফা ত্যাগ করেছে। গত সাত মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাফায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: