ডলারের দাম বাড়ায় সোনার মজুতে ব্যস্ত চীন-ভারত-তুরস্ক

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১১ মে ২০২৪ ১৯:০৯

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

নানা চাপে চীনের অর্থনীতি ধুঁকছে। এতে দেশটির নাগরিকেরা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটাতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সোনা কেনা শুরু করেছে। বসে নেই দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। ফলে মূল্যবান এ ধাতুর দাম রেকর্ড ছাড়াচ্ছে।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এপ্রিল মাসে ৬০ হাজার ট্রয় আউন্স স্বর্ণ জমা করেছে। টানা ১৮ মাস পিপলস ব্যাংক অব চায়না সোনা রিজার্ভ অব্যাহত রেখেছে।

তবে এটি কেবল অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয় নয়। স্বর্ণের প্রতি এই ঝোঁক শক্তিশালী ইউএস ডলার থেকে মুখ ফেরানোও বটে। কেননা ডলারের দাম বাড়ায় চীনের মতো উদীয়মান দেশগুলোর জন্য পণ্য আমদানি করা খুবই ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।

বিশ্বের ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান নির্ধারক ‘ইউএস ডলার সূচক’ এই বছর ৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালের শুরু থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে এমনটি হয়েছে, যার লক্ষ্য ডলারকে শক্তিশালী করা।

চীনা ইউয়ান এ বছর ডলারের বিপরীতে ১ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। এর মূল্য গত ১২ মাসে ৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালের শুরু থেকে ডলারের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে।

অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও সোনার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) গত সপ্তাহে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সোনার বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চীন, তুরস্ক এবং ভারত।

গোল্ড কাউন্সিল জানায়, দুই বছর বার্ষিক মোট চাহিদার প্রায় এক-চতুর্থাংশ সোনা কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। উচ্চ সুদহার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের দাপটে এসব ব্যাংক নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এই সোনার মজুত করছে ব্যাংকগুলো।

ডব্লিউজিসি আরও বলেছে, এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২৯০ টন সোনা কিনেছে, যা ইতিহাসে যেকোনো বছরের তুলনায় রেকর্ড। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২২ সাল থেকে প্রচুর সোনা কিনেছে, তবে সেগুলো এখনো কার্যকর করা হয়নি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোই শুধু সোনা কিনছে না, উদীয়মান বাজারের অন্যান্য ব্যাংকও সোনা কেনা শুরু করেছে।

উদীয়মান বাজারের যেসব কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে স্বর্ণ কিনেছে তাদের মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, ওমান, কিরগিজস্তান এবং পোল্যান্ড। দেশের সম্পদ মজুতে বৈচিত্র্য আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রাজনৈতিক প্রেরণাও রয়েছে এর পেছনে।

আমেরিকান বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকেরা গত মার্চের একটি প্রতিবেদনে লিখেন, এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র নয় এমন দেশগুলো ডলারবিমুখ হচ্ছে। কারণ দেশগুলো বুঝতে পেরেছে ডলারে রিজার্ভ রাখা ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রেরিদের নিষেধাজ্ঞায় তা বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে থাকা সরকারগুলোও বিশ্বব্যাপী উচ্চ এবং অস্থির মুদ্রাস্ফীতির কারণে স্বর্ণ মজুত শুরু করেছে। স্বর্ণের ওপর এমন চাপ দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের দুর্দিন আনতে পারে, যদি মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।

আন্তর্জাতিক আর্থিক-সেবা সংস্থা অ্যালিয়ানজয়ের অর্থনীতিবিদরা গত বছরের জুনে একটি প্রতিবেদনে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠলে এটি রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে দুর্বল হয়ে পড়বে। ডলারের দাম যদি আরও বাড়ে, তখন ঋণগ্রহীতারা বিকল্প উপায় খুঁজবে।

বর্তমানে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ২ হাজার ৩৩০ ডলার। এর আগে গত এপ্রিল মাসে প্রতি আউন্স সোনার রেকর্ড সর্বোচ্চ দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ ডলারের ওপরে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: