নির্বাচনের আগে ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে নিরাপত্তারক্ষীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘হাইব্রিড’ অস্ত্রধারীরা।
হাইব্রিডরা চেনা 'সন্ত্রাসবাদী' নয়, পুলিশের খাতায় তাদের নাম নেই। তারা এমনিতে বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত। তেমন কিছু মানুষের হাতে সাময়িকভাবে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে তারা। 'সহিংসতার' দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তারা চুপচাপ সেই কাজটা করে চলে যাচ্ছে স্বাভাবিক জীবনে। এদেরই বলা হচ্ছে ‘হাইব্রিড'।
কাশ্মিরের সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে আধা সেনাবাহিনী। একটু দূরে দূরেই রাস্তায়, গুরুত্বপূর্ণ ভবনের সামনে, ছাদে চোখে পড়বে তাদের। রাস্তায় সমানে চক্কর দিচ্ছে সিআরপিএফের গাড়ি। নিরাপত্তার এই আবহে সহিংসতা আগের তুলনায় অনেকটাই কম।
সূত্র জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে কৌশল বদল করছে অস্ত্রধারীরা। তারা সহিংসতার কাজে যুক্ত করছে হাইব্রিডদের। এই হাইব্রিডরা অনেকটা 'ভাড়াটে খুনির' মতো। তাদের ওপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তারা কাজ শেষ করে অস্ত্র ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। তারপর পেশাগত কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করছে। সময় কাটাচ্ছে পরিবারের সাথে।
আগে কাশ্মিরের তরুণরা অস্ত্র হাতে নিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার ছবি দিয়ে ঘোষণা করে দিত, তারা সহিংসতায় দীক্ষিত হয়েছে। ফলে তাদের চিহ্নিত করতে, তাদের মোকাবিলা করতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর কিছুটা সুবিধা হতো। এখন হাইব্রিডদের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেই।
শ্রীনগরের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি এমন দু’টি ঘটনা ঘটেছে। দু’টি ক্ষেত্রেই কয়েক দিনের মধ্যে পুলিশ হাইব্রিডকে চিহ্নিত করে, তাকে ধরতে পেরেছে। শুধু কয়েক দিন সময় লেগেছে।
বিরোধী রাজনীতিকরা হাইব্রিডদের প্রসঙ্গ তুলছেন। তারা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো হয়েছে, এটা ঠিক, তবে শান্তি এসেছে এটা বলা যাবে না। সিপিএমের ইউসুফ তারিগামি, এনসি-র ইমরান নবি ডর, পিডিপি-র মোহিত ভান, পণ্ডিতদের নেতা সঞ্জয় টিক্কু সকলেই এ বিষয়ে একমত।
তাদের অনেকেই হাইব্রিডদের প্রসঙ্গ তুলে জানান, ভালো পেশার সাথে যুক্ত, শিক্ষিত এই অজানা অস্ত্রধারীরা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কাশ্মিরের এই আপাত শান্তির পেছনে অশান্তির মেঘও আছে।
কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, হাইব্রিডদের সহিংসতার খুব বেশি ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের কাশ্মিরেও সহিংসতার ঘটনা নেই বললেই চলে। তারা অবশ্যই সতর্ক। কিন্তু এখনই অ্যালার্ম বেল বাজানোর কারণ ঘটেনি।
তারিগামির দাবি, কাশ্মিরের পরিস্থিতি অনেকটা ঝড়ের আগের শান্তির মতো।
পণ্ডিতদের নেতা সঞ্জয় টিক্কু বলেন, ‘পর্যটক হিসেবে ঘুরে দেখলে মনে হবে, সব ঠিক। আমরা যারা এখানে আছি, তাদের কাছে পরিস্থিতিটা চিন্তার। কার পকেটে রিভলভার আছে তা কে জানে?’
এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর একটা জায়গা থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। দু-একটা জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে উগ্রবাদীদের সংঘর্ষ হয়েছে। শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকা কার্যত ঘটনাশূন্য। কিন্তু সীমান্তের দিকে কিছু উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা এখনো আছে। সেই এলাকাও অনেকটা শান্ত। যেহেতু কাশ্মিরে নিরাপত্তা নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স' নীতি নেয়া হয়েছে। তাই হাইব্রিডদের নিয়ে চিন্তা তো আছেই।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: