‘বিষাক্ত’ পাউডার মিশ্রিত চিঠি পেলেন পাকিস্তানের এক ডজনের বেশি বিচারক

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১০

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

সন্দেহজনক সাদা পাউডার সংবলিত চিঠি পেয়েছেন পাকিস্তানের এক ডজনেরও বেশি জ্যেষ্ঠ বিচারক। এই পাউডার ‘বিষাক্ত’ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

২ এপ্রিল মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের আটজন বিচারক একই ধরনের চিঠি পান। সেখানে ইংরেজিতে একটি নোটে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে।

ইসলামাবাদ পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে (এফআইআর) বলা হয়েছে, নোটটিতে ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস শব্দটি উল্লেখ করা ছিল। ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস হলো একটি ব্যাকটেরিয়া, যা অ্যানথ্রাক্সের কারণ হতে পারে। উল্লেখ্য, অ্যানথ্রাক্স একটি গুরুতর সংক্রমণ। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করালে এই সংক্রমণে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

এরপর দিন ৩ এপ্রিল বুধবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজি ফয়েজ ঈসাসহ সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতি এবং লাহোর হাইকোর্টের পাঁচজন বিচারকও সন্দেহভাজন বিষাক্ত উপাদান সংবলিত একই ধরনের চিঠি পেয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, তেহরিক-ই-নামুস পাকিস্তান নামে একটি গোষ্ঠী সন্দেহজনক চিঠিগুলোর দায় স্বীকার করেছে।

ইসলামাবাদ ও লাহোরের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, চিঠি এবং সঙ্গের সবকিছুকেই তদন্তের জন্য ফরেনসিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। রহস্যময় সাদা পাউডার আদতে কী ছিল তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের তদন্ত করছি। তদন্তে অগ্রগতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা জানাব।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম শোনা গিয়েছিল তেহরিক-ই-নামুস পাকিস্তানের নাম। ইসলামাবাদের এক হাইকিং ট্রেইলে একটি সন্দেহজনক ব্যাগ পাওয়া গিয়েছিল। সেই ব্যাগে ছিল একটি চিঠি, হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি পিস্তল, কয়েকটি গুলি এবং শহরের বেশ কিছু স্পর্শকাতর ভবনের মানচিত্র। তখন তেহরিক-ই-নামুস পাকিস্তানের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়।

সেই চিঠিতেও গ্রুপটি বিচারব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছিল যে, তারা বিচারক ও জেনারেলদের ‘শিক্ষা দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে।

পাকিস্তানের শীর্ষ বিচারকদের কাছে বিষাক্ত চিঠিগুলো এসেছে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ছয় বিচারকের সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখার প্রায় এক সপ্তাহ পর। সেই চিঠিতে পাকিস্তানের প্রধান গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের বিরুদ্ধে (আইএসআই) বিচারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন বিচারকেরা।

চিঠিতে বিচারকেরা বলেছিলেন, কারাগারে বন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার রায়কে প্রভাবিত করার জন্য গোপন নজরদারি এবং এমনকি তাদের (বিচারকদের) পরিবারের সদস্যদের অপহরণ ও নির্যাতনের মতো ভীতিকর কৌশল ব্যবহার করেছে আইএসআই।

আইএসআই এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এখনো এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সরকার পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তে এক সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে কমিশনে নিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীকালে বিচারপতিদের চিঠিতে করা অভিযোগ তদন্তে সাত সদস্যের বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: