আল্লাহর হুকুমেই রাখতে হয় রোজা। রমজানের এক মাস কষ্ট সহ্য করে হলেও এই ব্রত পালন করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। কিন্তু সূর্য যখন তার উত্তাপকে অসহ্য পর্যায়ে নিয়ে যায় তখন সত্যিই এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হন মুসলিমরা।
এমনি এক কঠিন সময় পার করছেন আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানের রাজধানী শহর জুবার মুসলমানরা। এই রমজানে দেশটিতে তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এছাড়া তাপপ্রবাহ ও দাবদাহের কারণে রোজা রাখতে অসহনীয় কষ্টের সম্মুখীন দেশটির সাধারণ মুসলমানরা।
রোজা থাকা অবস্থায় খাবার ও পানি থেকে দূরে থাকতে হয় রোজাদারদের। আর অতিরিক্ত গরমে সেই কাজটি হয়ে যায় আরও কঠিন। ক্লান্ত শরীরে নিজেদের ঠাণ্ডা রাখার উপায় খুঁজতে থাকেন তারা।
অতিরিক্ত গরমের কারণে শুকিয়ে আসে গলা, শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। তাই এখানকার বেশিরভাগ মানুষ ইফতারে খাবারের চেয়ে পানি পান করাই বেশি পছন্দ করে। মসজিদে ফ্যান থাকলেও আছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা। বাতাস ঠান্ডা করার জন্য চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে বরফের ব্লক। কিন্তু এর চাহিদা বেশি থাকার কারণে বেড়ে গেছে দামও।
জুবার বাসিন্দা মরিয়ম কাইডেন বলেন, "আমার জন্ম এই শহরেই। কিন্তু এর আগে আমি এমন গরম কখনোই অনুভব করিনি। এমন গরমে রোজা রাখার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল তৃষ্ণা। আর এই তাপপ্রবাহের কারণে আমাদের শরীর রীতিমত কেঁপে ওঠে। অত্যধিক তৃষ্ণার কারণে আমার মুখ শুকিয়ে গেছে এবং আমার ঠোঁট মাড়িতে লেগে আছে।"
সুদানের চলমান আবহাওয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্প্রতি ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আশঙ্কায় বন্ধ করে দেয়া হয় দেশটির সকল স্কুল। এছাড়া তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিশুদের বাড়ির বাইরে না যেতেও অনুরোধ করে দেশটির সরকার।
সুদানের আবহাওয়াবিদ আগাওয়াই মোডো বলছেন, এমন তাপমাত্রার আশঙ্কা আগেই করেছিলেন তারা। তিনি জানান, "গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে গত বছর থেকে তা প্রকট হচ্ছে। এবং এটি প্রমাণ দিচ্ছে যে কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রভাব ফেলছে।"
শুধু দক্ষিণ সুদান নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে গোটা আফ্রিকা মহাদেশ। ২০২২ সালে এই মহাদেশের ১১০ মিলিয়ন মানুষ আবহাওয়া এবং জলবায়ু জনিত প্রভাবের শিকার হয়, যা সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি বয়ে আনে। এছাড়া খরা ও বন্যার কারণে মৃত্যুবরণ করে ৫০০০ মানুষ।
আইএমএফের একটি গবেষণা বলছে, ২০৪০ সাল নাগাদ আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশে বছরে ৬০ দিনেরও বেশি সময় তাপমাত্রা থাকবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। যা সেখানকার মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যে হবে বিরাট চ্যালেঞ্জ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: