জার্মানির একটি সামরিক বৈঠক হ্যাক করে রাশিয়ার হ্যাকাররা। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, রাশিয়ার ক্রাইমিয়া সেতুতে ২০২২ সালে যে হামলা হয়েছিল, তার পরিকল্পনা সাজিয়েছিল জার্মানি। এই হ্যাকের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে বার্লিন।
বিবিসি জানিয়েছে, জার্মানির ওই সামরিক বৈঠকে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মিসাইল সরবরাহ ও এই মিসাইলের সম্ভাব্য টার্গেট নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকের অডিও এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করেছে রাশিয়া টুডে (আরটি)। এতে শোনা যায়-জার্মান অফিসাররা আলোচনা করছিলেন যে, কীভাবে এই মিসাইলগুলো দিয়ে রাশিয়ার কার্চ সেতুতে (ক্রাইমিয়া সেতু) আঘাত হানা যায়।
২০১৪ সালে এক বিতর্কিত গণভোটের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় যুক্ত হয় ক্রাইমিয়া। এরপর ক্রাইমিয়ার উন্নয়ন ও যোগাযোগের কথা মাথায় রেখে আজভ সাগরের ওপর দিয়ে এই সেতুটি তৈরি করে রাশিয়া। ২০২২ সালে লুহানস্ক, দনিয়েতস্ক, খেরসন ও জাপোরিশিয়া অঞ্চল রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সেতুই ছিল ক্রাইমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ায় বাকি অংশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। যুদ্ধের শুরুতে এই সেতুর গুরুত্ব ছিল ব্যাপক। প্রথম দিকে রাশিয়া তার বিশাল সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠাতে এই সেতু ব্যবহার করেছে। তবে এখন ক্রাইমিয়ার সঙ্গে ল্যান্ড করিডোর স্থাপিত হওয়ায় সেনা মোতায়েনের জন্য এককভাবে আর এই সেতুর উপর নির্ভর করতে হয় না রাশিয়াকে।
রাশিয়ার রাজনীতিবিদরা বলেন, এই অডিও প্রমাণ করে যে তাদের দেশের সবথেকে বড় শত্রু আগে থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা করছিল।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলতজ ২ মার্চ শনিবার এই হ্যাক সম্পর্কে বলেন, এটি খুবই গুরুতর একটি বিষয়। এ কারণে এই অভিযোগের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এবং দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করতে হবে।
জানা গেছে, ওই ভিডিও কনফারেন্সটি কোনো গোপন সামরিক চ্যানেলে হচ্ছিল না, বরঞ্চ ওয়েবএক্স নামের একটি প্ল্যাটফর্মে হয়েছিল। ৩৮ মিনিট দীর্ঘ ওই অডিও শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন আরটি প্রধান মার্গারিটা সিমোনিয়ান। তিনি বলেন, এই অডিও প্রমাণ করে যে ক্রাইমিয়ায় হামলার জন্য জার্মানি পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল।
অডিওতে শোনা যায় যে, জার্মান অফিসাররা আলোচনা করছেন- কীভাবে তাউরুস মিসাইল দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা করা যায় এবং এর প্রভাব কী হতে পারে।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বিমান বাহিনীর ওই গোপন আলোচনায় আড়ি পাতা হয়েছিল।
এদিকে জার্মানির এমন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় এ নিয়ে দেশটির কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
তিনি বলেন, এই ইস্যুতে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে অপরাধ মেনে নেয়া। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি হেড দিমিত্রি মেদভেদেভ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে নাৎসি জার্মানির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আমাদের বহু পুরানো শত্রু আবারও আমাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: