সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে মালদ্বীপের। এবার এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এবার চীনের একটি জাহাজ মালদ্বীপে ভিড়তে চলেছে। ভারতের দাবি, গবেষণা জাহাজের কথা বলা হলেও, এটি চীনের একটি গোয়েন্দা জাহাজ।
চলমান কূটনৈতিক টানা-পোড়েনের মধ্যেই মোহামেদ মুইজ্জুর দেশে চীনা জাহাজের এমন গতিবিধি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আর গোটা ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এই জাহাজটি মূলত একটি গবেষণা জাহাজ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ। জাহাজটি ভারত মহাসাগরের তলদেশের ম্যাপিংয়ের কাজ করে থাকে। এটির দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশের ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্র তলদেশের ম্যাপিং করে পাওয়া তথ্য ভবিষ্যতে চীনের সাবমেরিন অথবা ডুবন্ত ড্রোন চলাচলে সহায়ক হবে। বিখ্যাত ভূ-স্থানিক বিশেষজ্ঞ ড্যামিয়েন সায়মন জানিয়েছেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মালেতে পৌঁছাবে জাহাজটি। ২০১৯ ও ২০২০ সালেও এই জলসীমায় জরিপ চালিয়েছিল এই জাহাজ।
এর আগে নয়াদিল্লির চাপে শ্রীলঙ্কা জাহাজটিকে নিজেদের বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। কিন্তু এবার ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে মালদ্বীপে ঘাঁটি গাড়তে চলেছে শিয়াং ইয়াং হোং ০৩ নামের চীনা জাহাজটি।
সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজ ট্রেকিংকারী অ্যাপ দ্য মেরিন ট্রেকারে অ্যাপে দেখা গেছে, চীনের ওই জাহাজটি এখন ইন্দোনেশিয়ার উপকূল দিয়ে মালদ্বীপের দিকে এগিয়ে চলেছে। জাহাজটি এরই মধ্যে সুন্দা প্রণালী দিয়ে জাভা ও সুমাত্রার মধ্যবর্তী অঞ্চল পার হয়ে এসেছে।
ভারতের সাথে দ্বন্দ্বের মধ্যেই মালদ্বীপের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বেইজিংয়ে বৈঠক করেন। তাদের দুজনের মধ্যকার বৈঠকের পরই ভারত মহাসাগরের জলসীমায় আসা শুরু করেছে চীনা জাহাজটি।
এর আগে একাধিক চীনা গোয়েন্দা জাহাজ শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে সাময়িক ঘাঁটি গেড়েছিল। ওই ঘটনায় কলোম্বোর উপরে ক্ষুব্ধ হয়েছিল নয়াদিল্লি। পরবর্তীকালে ভারতের আপত্তিতে ‘শিয়াং ইয়াং হং-৩’ নামের চীনা জাহাজটিকে হাম্বানটোটা বন্দরে ভিড়তে দেয়নি কলম্বো।
চলতি মাসের প্রথম দিকে ভারতের লাক্ষদ্বীপ সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে সমুদ্র সৈকতে বসে থাকার কয়েকটি ছবি পোস্ট করে, ভারতীয়দের এই দ্বীপ ভ্রমণের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মোদীকে ‘জোকার’ ও ‘পুতুল’ বলে কটাক্ষ করেন মালদ্বীপের যুব ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মরিয়াম শিউনা।
মোদীকে কটাক্ষ করেন মালদ্বীপের আরও দুই উপমন্ত্রী। পরে সমালোচনার মুখে ওই তিন উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে মুইজ্জু প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে অনলাইন যুদ্ধ শুরু হয় ও ভারত-মালদ্বীপের দ্বন্দ্ব আরও ঘনীভূত হয়।
ওই ঘটনার কয়েকদিন পরেই চীন সফর করেন দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কূটনৈতিক টানাপড়েনের এই আবহে চীনা ‘গুপ্তচর’ জাহাজের মালদ্বীপে আগমন নাটকীয় মোড় আনতে পারে দুই দেশের সম্পর্কে। যেখানে তৃতীয় পক্ষ চীনের উপস্থিতি আগুনে ঘি ঢালার জন্য যথেষ্ট।
সূত্র: এনডিটিভি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: