ব্রাজিলে খনিতে ফাটল, ধসে পড়বে ঘরবাড়ি

মুনা নিউজডেস্ক | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০৪

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত


ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি শিলা লবণের খনিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে সম্পূর্ণ ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফাটলের কারণে খনিতে হ্রদের পানিও প্রবেশ করেছে। স্থানীয় সময় রবিবার দুপুর সোয়া ১টায় এ ঘটনা ঘটেছে।


দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের ধারণা করা ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যাসিও শহরের কাছে মুন্ডাউ হ্রদে ঘোলা জলের বুদবুদ হচ্ছে, যেখানে খনিটি অবস্থিত।

ম্যাসিওর মেয়র জোয়াও হেনরিক কালদাস একটি হেলিকপ্টারে করে হ্রদের ওপর থেকে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেন। তার মতে, ফাটলটি ২০০ ফুট ব্যাস পরিমাপের একটি অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে। এতে বর্তমানে কোনো মানুষের জন্য হুমকি তৈরি হয়নি বলেও জানান তিনি।


কারণ আশপাশে বসবাসকারীদের ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খনিটি স্থিতিশীল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাইন ১৮ নামে পরিচিত বন্ধ খনিটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ব্রাজিলের পেট্রোকেমিক্যাল জায়ান্ট ব্রাস্কেম। গত চার দশকে শিলা লবণ আহরণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসের কারণে কয়েক হাজার বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।


ব্রাস্কেম নিশ্চিত করেছে, খনিটির চারপাশে থাকা ক্যামেরাগুলো হ্রদের মাটিতে ‘পানির অস্বাভাবিক চলাচল’ শনাক্ত করেছে।
এদিকে খনির ওপরের মাটি যে গতিতে তলিয়ে যাচ্ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। সরকারি পরিমাপে দেখা যায়, ৩০ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ২.৩৫ মিটার মাটি তলিয়ে গেছে।

২৯ নভেম্বর সিভিল ডিফেন্সের জন্য ম্যাসিও কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছিল, মাইন ১৮ ধসে পড়ার আসন্ন ঝুঁকিতে রয়েছে। তার পরও শিলা লবণ খনন নিয়ে শহরের সমস্যাগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।


২০১৮ সালে আশপাশের পাঁচটি ভবন এবং রাস্থায় ফাটল শুরু হয়। তার পর থেকে পাঁচ বছরে ১৪ হাজারেরও বেশি ভবন খালি করতে হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ভুক্তোভোগী হয়েছে। পরিত্যক্ত এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে ভূতের শহরে।
ব্রাজিল
২০২০ সালে তোলা ছবিতে একজন বাসিন্দা তার বাড়িতে ফাটল দেখছেন। (রয়টার্স)
ক্ষয়ক্ষতির জন্য মূলত ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভূমিকম্পকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের একটি ফেডারেল গবেষণায় দেখা গেছে, ফাটল এবং মাটির অবনমন ব্রাস্কেম পরিচালিত শিলা লবণের খনির কারণে হয়েছে।

কয়েক দশক ধরে ব্রাজিলিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কম্পানিটি এই অঞ্চলে কয়েক ডজন খনি পরিচালনা করেছে। শিলা লবণ পিভিসি উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ভূগর্ভস্থ গভীর মজুদ থেকে আহরণ করা হয়। এর কারণে সৃষ্ট গর্তে ওপরের মাটি ধসে পড়ে।

ব্রাস্কেম ব্রাজিলিয়ান ভূতাত্ত্বিক পরিষেবার বিশেষজ্ঞদের পরিচালিত গবেষণার ফলাফলগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ অভিহিত করে বিতর্কিত করেছে। তা সত্ত্বেও কম্পানিটি ২০১৯ সালে ম্যাসিওতে তাদের খনিগুলো বন্ধ করে দেয়। পরে এই বছরের শুরুতে তারা ভূমির অবনমন ও বাসিন্দাদের স্থানান্তরের ক্ষতির জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৩৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি সমঝোতায় পৌঁছয়। মাইন ১৮-এর আসন্ন পতন সম্পর্কে সতর্কতার পর পৌর কর্তৃপক্ষ ‘নতুন ক্ষতি’ অন্তর্ভুক্ত করতে কম্পানিটিকে একটি নতুন ক্ষতিপূরণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বলেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: