ছবি : সংগৃহীত
                                    
সামরিক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমঝোতা ও মানদণ্ডের প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে।
যে যুগে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ক্রমবর্ধমান হারে বৈশ্বিক শক্তি নির্ধারণ করছে, তখন সামরিক ক্ষেত্রে এআই নিখুঁতভাবে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তীব্রভাবে লড়াই করবে, তা বিস্ময়ের কিছু নয়।
সামরিক কৌশলে এআই আত্মস্ত করার ব্যাপারে চীনের অবস্থান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করার উচ্চাভিলাসকে প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নির্দেশনায় চীন নতুন যুগের জন্য একটি প্রতিরক্ষা কৌশল সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছে।
কমিউনিস্ট পার্টির অব চায়নার (সিপিসি) ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে শির এআই বিকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের প্রতি চীনের সংকল্পবদ্ধতা ঘোষণাটি চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরেছে।
চীন ২০১৫ সালে ব্যাপক মাত্রায় সামরিক সংস্কার করে। এর মাধ্যমে ভূমিভিত্তিক ভূখণ্ডগত প্রতিরক্ষার বদলে সম্প্রসারিত শক্তি প্রক্ষেপণের দিকে নজর দেয় পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। এসব পরিবর্তনের একটি প্রধান উপাদান ছিল স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (এসএসএফ) সৃষ্টি। এটি সীমান্ত এলাকায় মিশনগুলোকে কেন্দ্রীভূত করে এবং মহাকাশ, সাইবারস্পেস, তথ্য এবং মনোস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হিসেবে কৌশলগত কার্যক্রমকে একীভূত করা হয়।
চীনের এআই সামরিক কৌশলে এসএসএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা মহাকাশ, সাইবার, তথ্যের মতো ক্ষেত্রে কাজ করে। বিশেষ করে উপগ্রহ স্থাপন এবং তথ্য পর্যবেক্ষণে এআই ব্যবহারের ওপর তারা বিশেষ জোর দিচ্ছে।
অন্যদিকে আধুনিক যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কৌশলগত গুরুত্ব অনুধাবন করে তার বৈশ্বিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয়ভাবে এআই সক্ষমতা বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর ২০২৩ সালের কৌশল প্রকাশ করে জানিয়েছে যে তারা অত্যাধুনিক এআই সক্ষমতার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটা জোরদার করেছে। তারা নতুন এআইন এবং ডাটা-কেন্দ্রিক বিশেয়িতকরণের কাজে জোর দিয়েছে।
এক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো প্রজেক্ট 'রেপ্লিকেটর'।এই উদ্যোগের লক্ষ্য ২০২৬ সাল নাগাদ হাজার হাজার এআই-চালিত স্বায়াত্তশাসিত যান মোতায়েন। রেপলিকেটরের উদ্দেশ্য হলো ছোট, স্মার্ট, সস্তা ও নানা প্লাটফর্মের সামরিক উদ্ভাবনা ত্বরান্বিত করা।
সামরিক প্রতিযোগিতার অন্যতম ক্ষেত্র মহাকাশেও এআই-ভিত্তিক হাতিয়ার মোতায়েন করা হচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ বাহিনী 'ম্যাচিনা' নামের একটি অপারেশনাল প্রোটোটাইপ ব্যবহার করছে মহাকাশে ৪০ হাজারের বেশি বস্তুকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোতায়েনের জন্য।
আবার বিমানবাহিনী তার বিমান রক্ষণাবেক্ষণে এআই ব্যবহার করতে চাচ্ছে। পাইলটদের অবস্থা সম্পর্কেও এআইয়ের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে।
পেন্টাগন একইসাথে জয়েন্ট অল-ডমিয়েন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল নামে পরিচিত ইন্টারউইন্ডেড ব্যাটল নেটওয়ার্ক বিকাশের চেষ্টাও করছে।
এমন এক প্রেক্ষাপটে এআই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অবশ্য, গত মাসে সান ফ্রান্সিসকোকে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের বৈঠকে সামরিক ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহারের স্পর্শকাতরার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে সামরিক ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহারের সাথে থাকা ঝুঁকি প্রশমন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এসব আলোচনায় এআইয়ের মাধ্যমে নিউক্লিয়ার কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণের অটোমেশন নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়ানা স্কাইলার মাস্ট্রোর মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের অটোমেশন এড়ানোর জন্য সমঝোতার প্রয়োজন।
আবার আলোচনা সত্ত্বেও কোনো পক্ষই সম্ভবত তাদের সামরিক ক্ষেত্রে এআই মোতায়েন সীমিত করার বিষয়টি গ্রহণ করবে না। এতে করে এআইয়ের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে লড়াই হতে পারে। আর তা হতে পারে বিশ্বের জন্য আরেকটি বিপদ।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: