দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে সিয়েরা লিওন সরকার। রাজধানী ফ্রিটাউনে এক সেনাছাউনিতে বন্দুকধারীদের হামলা, অস্ত্রাগার লুটের চেষ্টা এবং কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দীদের মুক্ত করার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দেশটির সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। খবর রয়টার্স ও এপি।
২৬ নবেম্বর, রোববার দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার দিবাগত রাতে কিছু বন্দুকধারী ফ্রিটাউনের উইলবারফোর্স সেনাছাউনিতে ঢুকে একটি অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুটের চেষ্টা করে। তাদের যথাযথভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, সেনাছাউনিতে হামলার সময়ে রাজধানীর ফ্রিটাউনের সেন্ট্রাল পাডেমবা রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগারেও হামলা চালানো হয়। সে সময় কারাগার থেকে কয়েকজন বন্দীকে ছিনতাই করা হয়েছে বলে কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা রোববার ভোরে ফ্রিটাউনে ভারী গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। আবার কেউ কেউ জানান, তারা মারে টাউন জেলায় নৌবাহিনীর একটি ব্যারাকের কাছে গুলি বিনিময়ের আওয়াজ শুনেছেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে ওই বিবৃতিতে সব নাগরিককে নিজেদের ঘরে অবস্থান নিতে বলেছেন তথ্যমন্ত্রী চেরনর বাহ। তিনি বলেন, নিরাপত্তাবাহিনী সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বিও তার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই হামলার জন্য বিদ্রোহীদের একটি দলকে দায়ী করেছেন। বলেন, শান্তি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী পলায়নকারী বিদ্রোহী দলের বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে গণতন্ত্র রক্ষায় সকল নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা খর্ব করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।
এদিকে রোববার জারি করা এক বিবৃতিতে, পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিকব্লক, ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) সিয়েরা লিওনে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টার নিন্দা করেছে। বর্তমানে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার আটটি দেশ সরাসরি সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যও রোববারের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
গত জুনে বিতর্কিত এক নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হন সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বিও। তবে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফল বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল। এরপর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। সাম্প্রতিক সেনাছাউনিতে হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা এবং দেশজুড়ে কারফিউ জারি সেই অস্থিরতারই ধারাবাহিকতা।
পাঁচ মাস আগে তার নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার কারণে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস। সিয়েরা লিওনের ৭০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই দরিদ্র। একই সঙ্গে দেশটির যুব বেকারত্ব পশ্চিম আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: