বিশ্বব্যাপী ক্রমেই জোরালো হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের ঝুঁকি। নিউক্লিয়ার বোমার ব্যবহার সংযত রাখতে যেসব চুক্তি কার্যকর ছিল, সেগুলো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে শীর্ষ শক্তিধর দেশগুলো। পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে তারা। এমন পদক্ষেপ গণবিধ্বংসী এই হাতিয়ার ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পুরো মানবজাতির জন্যই ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনবে। খবর সংবাদ সংস্থা এপির।
রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে শুরু করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, যেখানে সংঘাত, সেখানেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি-ধামকি এসেছে। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে গণবিধ্বংসী এই অস্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী চার দশকের মধ্যে এখন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে। আর এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের মতো দেশগুলোর অস্ত্র সমৃদ্ধির হিড়িককে দায়ী করা হচ্ছে। এসব দেশের সামরিক কৌশলে দিন দিনই গুরুত্ব বাড়ছে পরমাণু অস্ত্রের।
এছাড়া গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার সংযত রাখার চুক্তিগুলো অকার্যকর হয়ে পড়াকেও অশনি সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি সিটিবিটি চুক্তি থেকে সরে এসেছে রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ। যা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতিও। এমন পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক বছরে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়বে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যা ভবিষ্যত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।
এ নিয়ে রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুসেভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পরিণতিই হলো, বর্তমান বৈশ্বিক নিরাপত্তার চরম অবনতি। তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ শুধু পুরনো সংকটগুলোই উস্কে দেয় তা নয়, নতুন করে সংকট সৃষ্টিও করে। বিনষ্ট করে সংকটের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা। এর জলন্ত উদাহরণ, আজকের মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত। তাই ভবিষ্যতে পারমাণবিক, রাসায়নিক এবং জৈব অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নিউক্লিয়ার শক্তিসমৃদ্ধির বিষয়ে সংযত হতে শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাজিসের পরিচালক উইলিয়াম আলবার্ক বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বচ্ছতা, ঝুঁকি কমানো। পর্যবেক্ষণ করতে হবে, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেন বাড়তে না পারে, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র প্রতিযোগিতার রূপ না নেয়। অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষের ঝুঁকি কমানোর দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে।
বিশ্বের ৯০ শতাংশ পরমাণু অস্ত্রের মালিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। সম্প্রতি চীনও তাদের পারমাণবিক কার্যক্রমের পরিধি বাড়াচ্ছে। নিরাপত্তার অযুহাতে অস্ত্র সমৃদ্ধির এমন প্রতিযোগিতা, হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞের পুনরাবৃত্তিরই ইঙ্গিত বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: