৩০ বছরের মধ্যে প্রথম জাতিসংঘ নাগোর্নো-কারাবাখে মানবিক মিশন পাঠাবে

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:৫৪

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


প্রায় ৩০ বছর পর জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো নাগর্নো-কারাবাখে এই সপ্তাহের শেষে একটি মানবিক মিশন পাঠাবে। আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি পুনরুদ্ধার করার পর মানবিক চাহিদা মেটাতে এই মিশন পাঠাবে জাতিসংঘ।

২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘের এক মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজারবাইজান সরকার এবং জাতিসংঘ এই অঞ্চলে একটি মিশনে সম্মত হয়েছে। মিশনটি সপ্তাহান্তে সংগঠিত হবে।’

বছরের পর বছর ধরে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে। জাতিসেংঘের মুখপাত্র মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘খুব জটিল এবং নাজুক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের প্রায় ৩০ বছর সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। সুতরাং, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা প্রবেশ করতে সক্ষম হব। মিশনটি আজারবাইজান থেকে আকাশপথে করা হবে।’

তিনি আরো যোগ করেছেন, ‘জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক বিভাগের নেতৃত্বে প্রায় ১২ জনের একটি দল এই অঞ্চলে আছে এবং তারা স্থানীয়দের চাহিদা বা প্রয়োজনগুলো পূরন করবে। অবশ্যই সবকিছু আন্তর্জাতিক আইন এবং বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে সম্মান করে করা হবে।’

আজারবাইজানকে নাগোর্নো-কারাবাখের বেসামরিক স্থাপনা থেকে তার সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য আর্মেনিয়া বিশ্ব আদালতে অনুরোধ জানানোর পর এই ঘোষণাটি আসল। আন্তর্জাতিক আদালত ফেব্রুয়ারিতে আজারবাইজানকে লাচিন করিডোর দিয়ে বিতর্কিত অঞ্চলে এবং সেখান থেকে অবাধ চলাচল নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়।

তখন প্রতিবেশী আর্মেনিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে আইনি বিরোধ চলছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে আর্মেনিয়া আন্তর্জাতিক আদালতকে আজারবাইজানকে দেওয়া আদেশগুলো পুনঃনিশ্চিত করতে এবং এই অঞ্চল থেকে অবশিষ্ট জাতিগত আর্মেনিয়ানদের বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমস্ত পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে বলেছিল।

কিছু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নাগর্নো-কারাবাখ থেকে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের নির্বাসন যুদ্ধাপরাধ। নির্বাসন বা জোরপূর্বক স্থানান্তর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার আজারবাইজান ঘোষণা করেছে রিপাবলিক অফ নাগর্নো-কারাবাখ আর থাকবে না।

রিপাবলিকের প্রধানকে গ্রেপ্তার করে গোপন বন্ধিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জেলে তার ছবিও প্রকাশ করেছে আজারবাইজান। তারপরেই এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ নাগর্নো-কারাবাখ মিশে যাবে আজারবাইজানের সঙ্গে। বস্তুত, এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বরআজারবাইজানের সেনা নাগর্নো-কারাবাখে অভিযান চালায়।

গত এক সপ্তাহ ধরেই নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ান মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পর কেউ আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করেননি। হাতের কাছে যা পেয়েছেন সঙ্গে নিয়ে তারা আর্মেনিয়ার পথে রওনা হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে আর্মেনিয়ার সীমান্তে। সেখানে সরকারের তরফ থেকে চারটি সাদা তাঁবু লাগানো হয়েছে। সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে এবং হেলথ চেকআপ করে আর্মেনিয়ায় ঢুকতে পারছেন উদ্বাস্তুরা। ট্রাক, ট্রাক্টর, গাড়ি, বাস, যে যা পেয়েছেন তাই নিয়েই চলে এসেছেন আর্মেনিয়ার সীমান্তে।

প্রায় এক লাখ ২০ হাজার আর্মেনিয়ান নাগর্নো-কারাবাখে থাকতেন। তারমধ্যে অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ ইতিমধ্যেই পালিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ কিছু মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজারবাইজানের সেনা এবং রাশিয়ার শান্তিরক্ষা বাহিনীর হাতে তারা খুন হয়েছেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু পৌঁছেছেন দক্ষিণ আর্মেনিয়ার গরিস শহরে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা ধরে না খেয়ে সেখানে পৌঁছেছেন তারা।

অধিকাংশ উদ্বাস্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না। তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক। অনেকেই দোষ দিচ্ছেন রাশিয়ার শান্তিরক্ষা বাহিনীকে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকেও দোষারোপ করছেন অনেকে। তার মধ্যস্থতাতেই এই ঘটনা ঘটলো বলে তাদের দাবি। কেউ কেউ আবার শান্তিরক্ষা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাদের নিরাপদে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

নাগর্নো-কারাবাখের বেশ কিছু অঞ্চলে আজারবাইজানের সেনা ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে। বস্তুত, কিছুদিন আগেই এই অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়েছিল। শেষপর্যন্ত রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়েছিল। এবার নাগর্নো-কারাবাখ পুনর্দখলের ঘোষণা দিল আজারবাইজান। স্থানীয় অনেকেই মনে করছেন, আরো বড় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। ফলে উদ্বাস্তুদের অনেকেই আর্মেনিয়ায় থাকতে চাইছেন, আর্মেনিয়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন তারা।


সূত্র: আলজাজিরা, ডয়চে ভেলে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: