শেষ হলো নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এ বছরের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ থেকে দূরে ছিল চীন ও রাশিয়া। এতে অবশ্য থেমে থাকেনি ভারত মন্ডপমের জি-২০ সম্মেলনের ঘোড়া।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে দূরে রেখেই নেওয়া হয়েছে বড় বড় উদ্যোগ। বিশ্ব শাসনের দুই ‘রাঘববোয়াল’র অনুপস্থিতিকে গুরুত্ব না দিয়েই নিজ পথে সম্মেলনকে এগিয়ে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোনো কিছুই বেঁধে থাকেনি চীন-রাশিয়ার জন্য। তারা যেন ভিনগ্রহের দুই রাজা থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না পৃথিবীর!
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার বলেন, যদিও ‘এই শীর্ষ সম্মেলনের জন্য দিল্লিতে কে আছেন অথবা কে নেই কেন অথবা তারা কেন অংশগ্রহণ করেননি তা নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র মনোনিবেশ হলো বাস্তব ফলাফল তৈরি। সে লক্ষ্যেই জি-২০ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।’ এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া উদ্যোগের পরিচালক ফারওয়া আমের বলেন, ‘ভারত তার দক্ষতাকে বিশ্বব্যাপী জাহির করতে নয়া দিল্লিতে চলমান জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন একটি মঞ্চ তৈরি করছে। এখানে শি ও পুতিনের অনুপস্থিতি এই জোটের প্রতিবন্ধক হবে না’। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
সম্মেলনের মাধ্যমে চীনের অবকাঠামোগত কূটনীতি মোকাবিলায় প্রচার হয়েছে আমেরিকান নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিক ঋণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়া হয়েছে আকর্ষণীয় সব প্রস্তাব। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিপরীতে একটি বিকল্প অংশীদার ও বিনিয়োগকারী দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা ‘ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোর’ একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন শনিবার। তিন অঞ্চলকে যুক্ত করতে একটি বহুজাতিক রেল ও বন্দর চুক্তি এটি।
পরিচ্ছন্ন শক্তি ও উন্নত সম্প্রদায় প্রচারের লক্ষ্যে চুক্তি ঘোষণার সময় বাইডেন বলেন, ‘এটি একটি বড় ব্যাপার। এটি সত্যিকারের একটি বড় চুক্তি।’ আরও বলেন, ‘যেহেতু আমরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অবকাঠামোগত ব্যবধান মোকাবিলায় কাজ করি তাই আমাদের বিনিয়োগের প্রভাবগুলোকে সর্বাধিক করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়নের বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলো পরবর্তী দশকে ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার পর্যন্ত নতুন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতায় পৌঁছাবে।
উন্নয়ন সহায়তা, বহুপাক্ষিক অর্থায়ন বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর উচ্চ মানদণ্ড দিয়ে চীনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীনের বিআরআই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ বিআরআইভুক্ত ১৪৮ দেশে শুধু ২০২২ ও ২০২১ সালেই চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
সম্মেলনে জি-২০ নেতারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তৈরির লক্ষ্যে অন্যান্য প্রকল্পের একটি পরিসরও ঘোষণা করেছেন। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লোবিটো করিডোর সম্প্রসারণের অংশীদারিত্ব। একটি আফ্রিকান অবকাঠামো প্রকল্পের আওতাধীন লোবিটো করিডর সম্প্রসারণ।
সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রত্যক্ষ নিন্দা জানানো থেকে দূরে ছিল জি-২০ দল। রাশিয়ার নামোল্লেখ না করে একটি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘যে কোনো রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অথবা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অধিগ্রহণের জন্য সব রাষ্ট্রকে হুমকি বা শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: