রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক ও বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে আরও ১৯ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। উগ্রপন্থায় উসকানি ও অর্থায়নের পাশাপাশি একটি উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার দায়ে তাকে নতুন এ সাজা দেওয়া হয়। নাভালনি ও তার সমর্থকদের দাবি, সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট, শুক্রবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে মেলেখোভো এলাকার একটি কারাগারে অস্থায়ী আদালত বসিয়ে নাভালনির শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
মেলেখোভোয় একটি পেনাল কলোনিতে রাখা হয়েছে নাভালনিকে। মূলত নির্বাসিত বন্দীদের এসব কলোনিতে রাখা হয়। সেখানেই একটি কক্ষে অস্থায়ী আদালত বসিয়ে নাভালনির বিচার করা হয়। বিচারপ্রক্রিয়া ছিল রুদ্ধদ্বার।
জানা যায়, এদিন নাভালনিকে কারাগারের পোশাক পরা অবস্থায় বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। সেসময় তিনি হাসছিলেন ও অন্য আসামিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
নাভালনিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন সরকারি কৌঁসুলিরা। একই সঙ্গে তাঁকে ‘স্পেশাল রেজিম কলোনিতে’ রাখারও আরজি জানান। তবে আদালত এ আর্জি মঞ্জুর করেছেন কি না তা জানা যায়নি। মূলত রাশিয়ার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের স্পেশাল রেজিম কলোনিতে রাখা হয়।
জানা যায়, নাভালনি তার বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে ইচ্ছা করে তাকে আজীবন কারাগারে আটকে রাখার পরিকল্পনা করার অভিযোগ তুলেছেন। এদিকে, গত মাসেও নাভালনি তার সমাপনী বিবৃতিতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নিন্দা করেছিলেন।
এদিকে, নাভালনির এ শাস্তিকে ‘অন্যায় বিচার’ বলে নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, কয়েক বছর ধরেই ক্রেমলিন নাভালনিকে নীরব করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি পুতি প্রশাসন তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আহ্বান রুশ জনগণের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।
‘সর্বশেষ গোপনে কথিত প্রমাণের ভিত্তিতে এ বিচার পরিচালনা করে ও নাভালনির আইনজীবীদের অধিকার সীমিত করে, রুশ কর্তৃপক্ষ যে রায় দিয়েছে, তাতে আবারও এ মামলার ভিত্তিহীনতা ও সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করার বিষয়টি সামনে আসে।’
রাশিয়ায় পুতিনের প্রধান সমালোচক নাভালনি ২০২১ সাল থেকে কারাগারে আছেন। প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘন, প্রতারণা ও আদালত অবমাননার দায়ে ৯ বছরের সাজা ভোগ করছেন তিনি।
এর আগে ২০২০ সালে সার্বিয়ায় নাভালনিকে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে গত বছর নাভালনি দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই গ্রেফতার হন। এর প্রতিবাদে সেসময় আন্দোলন করেন তার সমর্থকরা।
সূত্র: আল জাজিরা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: