পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল বিক্রিতে সফল রাশিয়া

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৪ জুলাই ২০২৩ ১০:২১

রাশিয়ার একটি বন্দরে তেলবাহী ট্যাংকার : সংগৃহীত ছবি রাশিয়ার একটি বন্দরে তেলবাহী ট্যাংকার : সংগৃহীত ছবি

 


পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বৈশ্বিক তেলের বাজারে প্রভাব বিস্তারে সম্প্রতি রাশিয়া আংশিক সাফল্য পেয়েছে। মস্কোর কোষাগার সংকুচিত করতে পশ্চিমারা রুশ তেলের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দিলেও গত কিছু দিন ধরে তা সেই মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা তেলের মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর এই প্রথম উরাল মানের অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের মূল্য ৬০ ডলার ছাড়িয়েছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে অপরিশোধিত তেল বিক্রিতে অন্তত আংশিক সাফল্য পেয়েছে ক্রেমলিন। সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ খবর জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)-এর মতে, মূল্য বৃদ্ধির ফলে তেল রফতানি থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয় বাড়বে। যদিও এক বছর আগের তুলনায় এই মূল্য গত মাসে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়ার ফলে চলতি বছরে তেল বিক্রি থেকে রাজস্ব আয় কমেছে রাশিয়া, এতে দেশটির বাজেটে প্রভাব পড়ছে।

নিষেধাজ্ঞার চাপ কমার আরেকটি ইঙ্গিত হলো, ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের সঙ্গে উরাল মানের রুশ তেলের মূল্যের পার্থক্য এখন ব্যারেল প্রতি ২০ ডলার। যদিও তা যুদ্ধের আগের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু জানুয়ারি থেকে এটি অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ওপেকপ্লাস উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তটি রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দাম পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া মূল্য ছাড়িয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। এশিয়ায় তেলের তীব্র চাহিদারও এক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। রুশ উৎপাদনকারীরা অঞ্চলটিতে সৌদি আরবের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের বিশ্লেষক সের্গেই ভাকুলেঙ্কো বলেছেন, পশ্চিমাদের এই নিষেধাজ্ঞার মূলে ছিল ইউরোপীয় নৌ পরিবহন ও বিমা কোম্পানির ওপর রাশিয়ার নির্ভরশীলতা। তারা এটিকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়াকে চেপে ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু রুশ তেলের মূল্য বৃদ্ধি ইঙ্গিত দিচ্ছে মস্কো তেলের ট্যাংকারের নতুন একটি নেটওয়ার্ক খুঁজে পেয়েছে। যার ফলে তেল রফতানির ওপর পশ্চিমা প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে।

ভাকুলেঙ্কো বলেন, এটি ছিল একটি বিবর্তনমূলক প্রক্রিয়া। এখন আমরা এর ফলাফল দেখছি। রুশ তেল কোম্পানিগুলো ব্যবসায় টিকে থাকতে ও অর্থ উপার্জনে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারা নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়াকে এখনও পশ্চিমা জাহাজ ও বিমার সুবিধা নিতে হচ্ছে তেল রফতানিতে। রুশ তেলের সর্বোচ্চ মূল্য আরও কমিয়ে রাশিয়ার ওপর আর্থিক চাপ তৈরি করা সম্ভব। কেউ কেউ এই মূল্য ২০-৩০ ডলারে কমিয়ে আনার পক্ষে মত দিচ্ছেন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সহযোগী ক্রেইগ কেনেডি বলেছেন, এককভাবে তেল রফতানি করতে রাশিয়ার যে ট্যাংকের বহর প্রয়োজন তা অর্জন থেকে দেশটি এখনও অনেক দূরে।

যুক্তরাষ্ট্রের উপ-অর্থমন্ত্রী ওয়ালি আদেয়েমো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সর্বোচ্চ মূল্যের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার রাজস্বকে উল্লেখযোগ্য কমিয়ে দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে একটি নতুন বিশ্ব তৈরি হচ্ছে রুশ তেলের সরবরাহে। আমাদের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার ওপর আরও আর্থিক চাপ তৈরি করা যাতে করে ইউক্রেনে অবৈধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অর্থের টান পড়ে।

সমালোচকরা বলছেন, রুশ তেলের সর্বোচ্চ মূল্য অনেক বেশি ধরা হয়েছে। পোল্যান্ডসহ ইউক্রেন এটি কমানোর পক্ষে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন মতভিন্নতার কারণে তা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কঠোর বাস্তবায়নে মনোযোগ দিচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাশিয়া ও তার বলয়ের কোম্পানিগুলো ট্যাংকারের বহর নির্মাণ শুরু করেছে। যেগুলোতে পশ্চিমাদের মালিকানা নেই, বিমা করা হচ্ছে না কোনও পশ্চিমা কোম্পানিতে। ফলে এগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছে না।

জাহাজ বিক্রেতা ব্রায়েমার-এর গবেষণা প্রধান হেরনি কুরা বলেছেন, সম্প্রতি রুশ তেল পরিবহন থেকে ইউরোপীয় কোম্পানির আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে জি-৭ দেশের বাইরের মালিকানাধীন ট্যাংকার ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার করতে পারছে রাশিয়া।

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, রাশিয়া একটি স্বতন্ত্র বহর তৈরি করছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মনে করেন, এই বহর উল্লেখযোগ্য তেল পরিবহন করছে না। বিকল্প রফতানির পথ তৈরিতে রাশিয়াকে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এই অর্থ ইউক্রেনে যুদ্ধের ব্যয় বহনে ব্যবহার করা হতো।


সূত্র : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: