নেপালে দুই জনপ্রিয় নেতার জোট, চাপে পুরোনো দলগুলো

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:২৪

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

নেপালের আসন্ন মার্চ মাসের সংসদীয় নির্বাচনের আগে দুই জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা একটি জোট গঠন করেছেন। এই জোট দেশটির রাজনীতিতে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে প্রভাবশালী পুরনো দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকেরা।

রবিবার কাঠমাণ্ডুর মেয়র ও সাবেক র‍্যাপার বালেন্দ্র শাহ (যিনি ‘বালেন’ নামে পরিচিত) জাতীয় স্বতন্ত্র পার্টি বা রাষ্ট্রীয় স্বাধীন দল (আরএসপি)-এ যোগ দিয়েছেন। আরএসপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক টিভি উপস্থাপক থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া রবি লামিছানে।

সোমবার দলীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জোট চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৫ মার্চের নির্বাচনে আরএসপি জয়ী হলে ৩৫ বছর বয়সী বালেন হবেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, ৪৮ বছর বয়সী রবি লামিছানে দলের প্রধান হিসেবেই থাকবেন।

এই দুই নেতা গত সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে হওয়া ‘জেন জি’ বা তরুণ নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে উত্থাপিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন।

ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওই বিক্ষোভে ৭৭ জন নিহত হন এবং এর জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি পদত্যাগে বাধ্য হন।

বিশ্লেষক বিপিন অধিকারী বলেন, ‘বালেন ও তার তরুণ সমর্থকদের আরএসপির সঙ্গে যুক্ত করা দলটির জন্য খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরো বলেন, ‘তরুণ ভোটারদের আরএসপির দিকে সরে যাওয়ার আশঙ্কায় ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলো এখন বড় চাপের মধ্যে রয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ভোট দেওয়ার যোগ্য।

সাম্প্রতিক বিক্ষোভের পর প্রায় ১০ লাখ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই তরুণ।

বিক্ষোভের সময় বালেন আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন এবং সেপ্টেম্বরের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের অনানুষ্ঠানিক নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখেন, যে সরকার নির্বাচনের তদারকি করবে।

তবে কিছু সমালোচক বিক্ষোভে বালেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, তিনি খুব কমই প্রকাশ্যে হাজির হয়েছেন এবং মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমেই সমর্থকদের উদ্দেশে কথা বলেছেন।

গত তিন দশকের বেশিরভাগ সময় ক্ষমতা ভাগাভাগি করে শাসন করেছে কে.পি. শর্মা অলির কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট)—ইউএমএল এবং মধ্যপন্থী নেপালি কংগ্রেস। বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে এই দুই দলই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বালেনের জোটের কারণে।

রবি লামিছানে ২০২২ সালের নির্বাচনের আগে আরএসপি গঠন করেন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়ে টিভি উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করায় তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পান। তবে লামিছানে বর্তমানে একটি মামলায় জামিনে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সমবায়গুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নেপালি কংগ্রেস দলের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মহত বলেন, বালেন ও লামিছানে উভয়েই বিতর্কিত নেতা এবং তাদের এই জোট নির্বাচনে খুব বড় প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই তার ধারণা।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: