ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বোন নোরিন খান নিয়াজি ভারতের সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ওই সাক্ষাৎকারে ইমরানের বোন পাকিস্তানের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। অথচ তিনি আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেননি বা ভারতীয় নেতৃত্বের সমালোচনা করেননি।
আদিয়ালা কারাগারে বন্দী ইমরান খানের সঙ্গে স্বজন ও দলের সদস্যদের দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন। গত সপ্তাহে ইমরানের তিন বোন আদিয়ালা কারাগারের বাইরে অবস্থান নেন। বোনদের অভিযোগ, ইমরানের সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ইমরানের বোন নোরিন নিয়াজির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, তিনি কেন ভারতীয় টেলিভিশনের কাছে অভিযোগ করলেন? ভারতের মুসলিমদের দুর্দশা বা কাশ্মীয় নিয়ে বিরোধের প্রসঙ্গে কথা না বলে কেন তিনি তাদের কাছে নিজেদের ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে উপস্থাপন করলেন?
তারার বলেন, ‘যারা ভারতীয় চ্যানেলে গিয়ে পাকিস্তানের মানহানি করে, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত। নোরিন খান নিয়াজি যে ভারতীয় চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেখানে কি তিনি মোদির নিন্দা করেছেন?’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনাদের ধিক্কার জানাই যে আপনারা ভারতীয় চ্যানেলে গিয়ে দখল করা কাশ্মীর, মার্কা-ই-হক, শহীদদের কথা বললেন না। আপনারা শুধু দুর্নীতির মামলায় জড়িত এক বন্দীর ‘পীড়িত হওয়ার’ কথা বলে কান্নাকাটি করলেন?’
তারারের দাবি, ইমরানের পরিবার ও তাঁর দলের মনোভাব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আর তা জেনেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পরিবারটিকে একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইমরানের বোন আলিমা খান, উজমা খান, নোরিন খান নিয়াজিসহ ইমরানের দল পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন সদস্য কারাগারের বাইরে জড়ো হন। পিটিআই বলছে, নারীরা শান্তভাবে বসে ছিলেন। অথচ পুলিশ তাঁদের সহিংসভাবে আটক করেছে।
তবে মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার তাঁদের নির্দোষ মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ২০২৩ সালের ৯ মে প্রথম দফায় ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর যে সহিংসতা হয়েছিল, তার সঙ্গে ইমরানের বোনেরা সম্পৃক্ত ছিলেন।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইমরান আহমেদ নিয়াজি সাহেবের এই তিন বোন ২০২৩ সালের ৯ মে কোর কমান্ডারের বাড়িতেও উপস্থিত হয়েছিলেন। যদি আমার আইনি মতামত চান, তাহলে বলব, তাঁদের উপস্থিতিটাই এ ক্ষেত্রে প্রমাণ...তাঁরা ৯ মে সেখানে ছিলেন। তাঁরা দলে দলে লোকজনকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, তিনজনই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
তারারের দাবি, সরকারের সাম্প্রতিক অর্জন থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইমরান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। এর মধ্যে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযোগও রয়েছে।
গত শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের মৃত্যু নিয়ে ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়েছে বলে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে তাঁকে আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
তবে আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কারাগার থেকে তাঁকে (ইমরান খান) স্থানান্তর–সম্পর্কিত কোনো খবর সত্য নয়। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।’
কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, ইমরানের স্বাস্থ্য নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: