শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে ইউক্রেন প্রস্তুত: জেলেনস্কি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২১ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৪০

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে ইউক্রেন প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দুই পক্ষের মতামতের ভিত্তিতেই পরিকল্পনা তৈরি বলে দাবি হোয়াইট হাউজের। যদিও ইউরোপীয়দের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি মস্কোর অনুকূলে। এদিকে যুদ্ধরত সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাশিয়ার সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন পুতিন। এদিকে শান্তি প্রস্তাব চলমান আলোচনার মধ্যেও জাপোরিঝিয়ায় রুশ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচজন।

চার বছরে গড়াতে যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রুশ হামলায় অনেকটা কোণঠাসা ইউক্রেন বাহিনী। ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ অঞ্চল এখন মস্কোর দখলে। গেল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গাইডেড বোমা হামলায় আগুন ধরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় যানবাহন ও আবাসিক ভবনে। যুদ্ধ বন্ধে চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যেও ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।

এমন অবস্থায় শান্তির বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, যুদ্ধ অবসানে ২৮ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে। যেগুলো এখনো মস্কোর নিয়ন্ত্রণে নেই। বিনিময়ে ভবিষ্যতে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন ও ইউরোপ নিরাপত্তার গ্যারান্টি পাবে।

এবার যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব নিয়ে কাজ করতে ইউক্রেন আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি জানান, যুদ্ধ বন্ধে গঠনমূলক, সৎ এবং দ্রুততার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, এরইমধ্যে তারা পরিকল্পনার একটি খসড়া পেয়েছেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে আশা ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের।

ইউক্রেন প্রসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনেক ধন্যবাদ। ইউক্রেন এবং আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তিনি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যা করেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইউক্রেন জাতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবকে রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করারই শামিল বলে নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপের বেশকিছু দেশ। ইইউর পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কাজা কালাস বলেন, যে কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় ইউরোপ এবং ইউক্রেনের রাখা প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ, শুধু রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই এই শান্তি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবের বিষয়গুলো পুরোপুরি রাশিয়ার অনুকূলে।

যদিও হোয়াইট হাউজের দাবি, দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছে। উভয় পক্ষের কাছেই এটি গ্রহণযোগ্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর হবে বলে জানান হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন উভয় পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। শান্তি পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং পরিবর্তনশীল। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। যা রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের জন্যই ভাল প্রস্তাব। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস এটি দুই পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে।'

এদিকে ফ্রন্ট লাইন রুশ সেনা ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুদ্ধের সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোজ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় রুশ সেনা প্রধান জানান দোনেৎস্কের পোকরোভস্কের ৭০ শতাংশ এবং খারকিভের ভোভচানস্কের ৮০ শতাংশ রাশিয়ার দখলে রয়েছে। ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ তৈরির কথা বলেন পুতিন।

তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান যুদ্ধের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান সম্পর্কে অবগত করেছেন। তাকে ধন্যবাদ জানাই। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেন অস্ত্র সমর্পণ এবং আত্মসমর্পণ করতে পারে সেই পথ বের করা উচিত। রুশ সেনাদের সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি বলেন, টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত শান্তির একমাত্র পথ হল কূটনীতি। ইউক্রেনের অভিযোগ, সন্ত্রাস ও গণহত্যা চালিয়ে ইউক্রেনকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। আর মস্কোর দাবি, যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে ইউক্রেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: