পৃথিবীর আয়না : সালার দে ইউনি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৫ জুন ২০২৩ ২১:৪৯

সালার দে ইউনি : সংগৃহীত ছবি সালার দে ইউনি : সংগৃহীত ছবি

 

পৃথিবীর বুকে রয়েছে অপরূপ রূপের ভাণ্ডার। প্রকৃতি নিজস্ব রুপ যখন ফুটিয়ে তোলে তখন তা স্বর্গরূপে পরিনত হয়। এমনই এক স্বর্গরূপের নাম সালার দে ইউনি। যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ প্রাকৃতিক আয়না বলা হয়। অবাক হলেও সত্যি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় বারো হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি মালভূমি অঞ্চল।

নিয়মিত রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে খটখটে শুকনো আবহাওয়ায় শুধুই শূন্যতা। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই জায়গাটি পরিণত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়নায়। যেখানে মনে হবে আপনি এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছেন। এটি দক্ষিণ বলিভিয়ার শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত সালার ডি ইউনি। যাকে ইউনি সল্ট ফ্ল্যাট বলা হয়ে থাকে।

 

 

লবণ জমেই সৃষ্টি হয়েছে এ সমতল ভূমির। প্রায় ৩০-৪২ হাজার বছর আগে, এ অঞ্চলটি একটি বিশাল প্রাগৈতিহাসিক হ্রদ, মিনচিন হ্রদের অংশ ছিল। পরবর্তীতে হাজারো বছর ধরে ধারাবাহিক পরিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিক ওই লেকের পানি শুকিয়ে যায়।

এখানে অণুজীবসহ জীবন্ত একটি সবুজ হ্রদ, পরিত্যক্ত রেলপথ ট্র্যাক, শুকনো শিলা থেকে অঙ্কুরিত এলিয়েনের মতো সবুজের বিশাল ব্লবস, গরম গিজার ল্যান্ডস্কেপ, প্রাকৃতিক হট স্প্রিংস, পরাবাস্তব শিলাসহ আরও অনেক কিছুর দেখা মিলবে। ইচ্ছা হলেও ঘুরে আসা যায় এই স্বপ্নের দেশ থেকে।

তবে তলানিতে জমে থাকা লবণ ও লিথিয়ামসহ বহু খনিজ পদার্থ পড়ে থাকে। বিশ্বের ৫০-৭০ শতাংশ লিথিয়াম মজুদ রয়েছে এখানে। এই বিস্তৃত অঞ্চলটি বর্ষাকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়নায় পরিণত হয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টিপাত হয়।

 

 

তখন মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আকাশ যেন মাটিতে মিশে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানটি থাকে সাদা। তখন লবণের মরুভূমিতে পরিণত হয় সালার দে ইউনি। এর উপর দিয়ে তখন যানবাহন চলাচল করতে পারে। এই বিশাল জায়গার যেখানে পা রাখবেন সেখানেই দেখবেন প্রতিচ্ছবি।

অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত বৃষ্টির পানি এর ওপর তৈরি করে দিগন্ত বিস্তৃত এক আয়না। এসময় মরুপৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয় ঝকঝকে নীল আকাশ। রূপের এ সুধা পান করতে বলিভিয়ায় ছুটে যান হাজার হাজার পর্যটক। সালারের লবণের পরিমাণ ৬৪ বিলিয়ন টন। এটি বলিভিয়ার লবণের প্রধান উৎস্য।

সালার দে ইউনিতে যেকোনো সময়ই চাইলে ঘুরতে যেতে পারেন। নিকটবর্তী শহর থেকে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত ভাড়ায় লবণভূমিতে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় ২০০ গাড়িভর্তি পর্যটক ঘুরতে আসেন আয়নাভূমিতে।

 

 

সালার দে ইউনির মাঝে কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপে গেলে মন ভরে যায়! দ্বীপগুলোতে রয়েছে শত শত বছরের পুরনো ক্যাকটাস। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালার দে ইউনির সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্যান্য সুদর্শনীয় স্থানের চেয়েও নৈসর্গিক।

এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে বহু হোটেল। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম হলো প্যালাসিও দে স্যাল। যার অর্থ লবণের প্রাসাদ।

 

 

২০০৭ সালে গড়ে তোলা হোটেলটি সম্পূর্ণ লবণ দিয়ে তৈরি। হোটেলের মেঝে, দেয়াল ও ছাদ থেকে শুরু করে খাট, চেয়ার, টেবিলসহ সব আসবাবপত্রই তৈরি করা হয়েছে লবণ দিয়ে। লবণের এই দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করতে ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের প্রায় ১০ লাখ লবণের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সালার দে ইউনি লবণের উন্মুক্ত খনি। ধারণা করা হয়, ১১ কোটি টন লবণ রয়েছে এ খনিতে।

সালার দে ইউনিতে শুধু পর্যটকদেরই আগমন ঘটে না; প্রাণীজগতেরও প্রজননভূমি এ স্থানটি। বিভিন্ন প্রজাতির কানঠুটির প্রধান প্রজননক্ষেত্র স্থানটি। এ আয়নাভূমিতে প্রায় ৮০ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। এছাড়াও এটি কাল্পেও, বলিভিয়ান ভিজকাচা, আন্দীয় হাঁস, আন্দীয় হিলস্টার, ভিকুয়াসসহ আরো বহু বিচিত্র প্রাণীর আবাসস্থল।

 

 

মরচে পড়া রেলগাড়ির সমাধি, চোখ ঝলকানো লবণের হ্রদ, লবণের তৈরি হোটেল ও ফুটন্ত কাদার পুল, প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি ইত্যাদি কারণে সালার দি ইউনি ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট অন্যতম জনপ্রিয় এক গন্তব্যস্থল।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: