বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, চলতি দশক পার হওয়ার আগেই আর্কটিক সাগর বরফ শূন্য হয়ে পড়তে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বিশ্বের তাপমাত্রা যে দ্রুত গতিতে বাড়ছে তারই ইঙ্গিত এটি

২০৩০ সালের আগেই আর্কটিক সাগর বরফ শূন্য হওয়ার শঙ্কা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৪ জুন ২০২৩ ২১:৪৭

আর্কটিক সাগর : সংগৃহীত ছবি আর্কটিক সাগর : সংগৃহীত ছবি


জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যেভাবে বিপর্যয় ডেকে আনছে তাতে অনেক অদূর ভবিষ্যতের জন্য করা অনেক ধারণাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দৃশ্যমান হচ্ছে। তেমনি একটি আশঙ্কার কথা জানালেন বিজ্ঞানীরা। তাদের আশঙ্কা, চলতি দশক পার হওয়ার আগেই আর্কটিক সাগর বরফ শূন্য হয়ে পড়তে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বিশ্বের তাপমাত্রা যে দ্রুত গতিতে বাড়ছে তারই ইঙ্গিত এটি।

৬ জুন, বুধবার সংবাদমাধ্যমে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, জার্নাল নেচার কমিউনিকেসন্সে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ২০৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগেই আর্কটিক সাগরের বরফ পুরোপুরি উধাও হয়ে যাবে। এমনকি বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রীষ্মকালে আর্কটিক সাগরে আর বরফের দেখা পাওয়া যাবে না।

 

আর্কটিক সাগরের বরফ কতটা দ্রুত গলছে সে বিষয়ে ধারণা পেতে গবেষকরা ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি ও তথ্যের ভিত্তিতে কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন ক্লাইমেট মডেল মূল্যায়ন করে দেখেছেন।

গবেষকরা বলেন, মানব সৃষ্ট কারণে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী দূষণের কারণেই মূলত আর্কটিক সাগরের বরফ কমছে। এছাড়াও, আগের ক্লাইমেট মডেলগুলোতে আর্কটিক সাগরে বরফ গলে যাওয়ার প্রবণতাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

প্রধান গবেষক এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পোহাং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সেউং-কি মিন সিএনএনকে বলেন, “গ্রীষ্মে আর্কটিক একদম বরফ শূন্য থাকবে এমনটা আবিষ্কার করে আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, যেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

শীতকালে আর্কটিক সাগরের ওপর বরফ জমা হতে শুরু করে। গ্রীষ্মকালে তা আবার গলতে থাকে। সাধারণত, সেপ্টেম্বর মাসে বরফ সবচেয়ে কম থাকে এবং তারপর শীতের আগমনে পুনরায় নতুন করে বরফ জমতে শুরু করে।

 

অধ্যাপক সেউং-কি মিন বলেন, “যখন গ্রীষ্মে আর্কটিক বরফ শূন্য হয়ে পড়বে, তখন শীতকালে বরফ জমার গতি ধীর হয়ে পড়বে। প্রথম দিকে শুধু সেপ্টেম্বর মাসই হয়তো বরফমুক্ত থাকবে। তবে আস্তে আস্তে তা গোটা গ্রীষ্মকালের জন্যই এটা সাধারণ অবস্থায় পরিণত হবে। এমনকি দূর ভবিষ্যতে শীতকালেও আর্কটিকে বরফ কম দেখা যাবে।”

প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৮০ সালের পরপরই পুরোপুরি বরফহীন হয়ে যাবে আর্কটিক সাগর। যদি এই হারে জ্বালানি তেল পোড়ানো হয় এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী অন্যান্য কার্ক্রম অব্যাহত থাকে তাহলে এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই।

ফিনিশ আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের গবেষক মিকা রান্টানেন সিএনএনকে বলেন, “আর্কটিক সাগর বরফমুক্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে- তা সাধারণ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়নি। গবেষণা ও ক্লাইমেট মডেল বিশ্লেষণ করে করা হয়েছে। আমাদের বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে এখনই সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”

 

সূত্র : সিএনএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: