পৃথিবীর অক্ষ প্রায় ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চি (৮০ সেন্টিমিটার) সরে গেছে। এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন এবং ব্যবহার। এর ফলে ধরণির ঘূর্ণনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রবল হয়েছে। জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধের বরাতে এ খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।
পৃথিবীর অক্ষ খানিকটা সরে যাওয়াটা মূলত এই ধরণির ভরবন্টনের ওপর নির্ভর করে। তবে এর মানে ধরণী কাঁত বা হেলে গেছে তা কিন্তু নয়। পৃথিবী যে অক্ষের (এক্সিস) চারপাশে ঘোরে, সেটি একটি কাল্পনিক রেখা। এটি কিন্তু নির্দিষ্ট বিন্দুতে স্থির থাকে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কারণে এটি সামান্য স্থানান্তরিত হতে পারে। ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চি স্থানান্তর মানে পৃথিবীর অক্ষের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্যাপকমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া-এ দু'য়ের প্রভাবে ভরের বণ্টন পরিবর্তিত হয়েছে। যখন বরফ গলে মেরু থেকে পানি নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে যায়, তখন পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং অক্ষ সরতে শুরু করে। এটি অনেকটা সেই প্রক্রিয়ার মতো, যেখানে স্কেটার/ব্যালে ড্যান্সার তার হাত প্রসারিত করলে তার ঘূর্ণন ধীর হয়ে যায়।
গবেষণাটি ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়কালীন তথ্য পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা গেছে, প্রায় ২,১৫০ গিগাটন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পৃথিবীর অক্ষ প্রায় ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চি সরে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানি মূলত কৃষিকাজ ও মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজনে উত্তোলন করা হয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠে প্রভাব: এই ভূগর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় তোলার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় শূন্য দশমিক ২৪ ইঞ্চি বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভূ-ভৌতিক বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান লেখক কি-উইয়ন সিও বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণগুলোর মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্বণ্টনের প্রভাব পৃথিবীর অক্ষের সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পৃথিবীর ঘূর্ণনে প্রভাব: গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন যে ভূগর্ভস্থ পানির এই কমতি পৃথিবীর ঘূর্ণন প্রক্রিয়ায় আশঙ্কাজনক পরিবর্তন আনতে পারে। যখন মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যায়, তখন পানি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জমা হয় এবং পৃথিবীর অক্ষের দিকে সরে যাওয়া শুরু হয়। গবেষণাটি প্রথম ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে এর কিছু অংশ সংশোধন করে সম্প্রতি পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে। এই ধরনের পরিবর্তন পরিবেশের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের গতিও তীব্রতর হতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: