হজে শত শত মৃত্যু : সরকারের ব্যর্থতা নয়, বলছে সৌদি আরব

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৪ জুন ২০২৪ ১৮:২০

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


হজের সময় ঘটে যাওয়া শত শত মৃত্যুর ঘটনায় সৌদি সরকারের কোনো ব্যর্থতা ছিল না বলে দাবি করেছে দেশটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়নি, তবে ঝুঁকিগুলো উপলব্ধি করতে না পারা কিছু মানুষের ভুল বিচার ছিল।’ এই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়ায়, ওই কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে এ কথা জানান।

এএফপির হিসেবে, বিভিন্ন সরকারি বিবৃতি এবং কূটনৈতিক সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, এবারের হজে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১২৬ জনে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মিশরীয় নাগরিক।

সৌদি ওই কর্মকর্তা জানান, হজের ব্যস্ততম দুই দিনে—শনিবার আরাফাতের ময়দানে এবং রবিবার মিনায়— মোট ৫৭৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সৌদি সরকার।

তিনি বলেন, ‘এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং তীব্র তাপমাত্রার মধ্যে।’ তবে তিনি স্বীকার করে নেন যে, ৫৭৭ জনের এই সংখ্যাটি আংশিক এবং বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হজের সকল মৃত্যুর তথ্য এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হলো হজ। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।

এর আগে সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এ বছর প্রায় ১৮ লক্ষ হাজি হজ পালন করেছেন, যা গত বছরের মতোই। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ হাজি বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিলেন।

কোটা পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে হজের অনুমতি বরাদ্দ করা হয় এবং লটারির মাধ্যমে ব্যক্তিদের মধ্যে তা বিতরণ করা হয়।

অনুমোদন পেতে সক্ষমদের ক্ষেত্রেও, অত্যধিক খরচের কারণে অনেক হাজি অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করেন। যদিও তারা ঝুঁকি নেন, কারণ সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হয়।

২০১৯ সালে সৌদি আরব পর্যটন ভিসা চালু করার পর থেকে, অনিয়মিতভাবে হজ পালনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কারণ এই ভিসার মাধ্যমে সহজেই সৌদি আরবে প্রবেশ করা যায়। অনিয়মিত উপায়ে হজ পালন করে হাজিরা হাজার হাজার ডলার সাশ্রয় করতে পারেন।

এ বছরের হজের আগে, সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে তারা মক্কা থেকে ৩ লক্ষেরও বেশি হজের অনুমতিহীন হাজিকে সরিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু পরে, ওই সৌদি কর্মকর্তা শুক্রবার জানান, ‘উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছিল যে, পবিত্র স্থানের ফটকে অবস্থানকারী সকলকেই আমরা হজ পালনের অনুমতি দিই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করতে পারি যে, প্রায় ৪ লক্ষ অনুমোদিত হাজি হজ পালন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের প্রায় সকলেই একটি দেশের নাগরিক’, যা মিশরকে ইঙ্গিত করে। এর আগে আরব কূটনীতিকরা এএফপিকে জানিয়েছিলেন যে, নিহতদের মধ্যে ৬৫৮ জনই মিশরীয় এবং তাদের মধ্যে ৬৩০ জনই ছিলেন অনুমোদনহীন।

আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র শুক্রবার জানান, হজের সময় ‘বহু’ আমেরিকান নাগরিক মারা গেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবে বহু আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছি।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।

ইসলামি চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসারে হজ অনুষ্ঠিত হয়। সৌদি আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, সোমবার মক্কার মসজিদুল হারামে তাপমাত্রা ছিল ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অনুমোদিত হাজিরা হজকে সহনীয় করে তোলার জন্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তারা এয়ারকন্ডিশনড তাঁবু ব্যবহার করতে পারেননি।

অনুমোদনহীন কিছু মিশরীয় হাজি এএফপিকে জানান, তারা তাদের প্রিয়জনদের জন্য হাসপাতালে আসন পেতে অথবা অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে পেতে কষ্ট ভোগ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে হাজিরা সময়মতো চিকিৎসা পেতে না পেরে মারা যান।

তারা আরও জানান, তারা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করেও হজের সরকারি বাস ব্যবহার করতে পারেননি। পবিত্র স্থানগুলিতে ভ্রমণের জন্য এসব বাসই একমাত্র যানবাহন।

তীব্র তাপমাত্রার মধ্যে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার ধারে অনেককে নিথর পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ওই সিনিয়র সৌদি কর্মকর্তা শুক্রবার এএফপিকে জানান যে, অনুমোদনহীন হাজিরা যাতে বাস ব্যবহার করতে না পারেন সে জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না।

তিনি বলেন, ‘তারা যাতে বাস ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কিন্তু এসব বাস কেবলমাত্র সেসব নিবন্ধিত হাজিরদের জন্য প্রস্তুত ছিল যাদের আসার কথা আমরা জানতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনুমোদনহীন হাজিরা যেসব রুট ব্যবহার করে ভ্রমণ করতেন সেখানে খাবার অথবা চিকিৎসা সেবা — অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা ছিল না। সেসব রাস্তা কেবলমাত্র বাস চলাচলের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: