ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়

মুনা নিউজডেস্ক | ২২ জুন ২০২৪ ০০:৪৮

ছবি: সংগৃহীত ছবি: সংগৃহীত

 

পৃথিবীতে প্রাকৃতিক নিয়মেই ঝড়বৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে। মহান রাব্বুল আলামিনই সব কিছুর মালিক। তাঁর নির্দেশেই এসব কিছুই হয়ে থাকে। আর প্রকৃতি আল্লাহর দান। মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করেই প্রকৃতিকে সাজানো হয়েছে। প্রকৃতি মহান আল্লাহর সৃষ্ট, তিনি কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। মাঝেমধ্যে প্রকৃতি বিরূপ রূপ ধারণ করে। রূঢ় ও রুষ্ট হয়, যাকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে থাকি। যেমন ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বর্ষণ, বন্যা, খরা, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ; দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে পবিত্র কুরআনুল কারিমে একাধিক আয়াত নাজিল করেন।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা পরিমিত ও সু-বিন্যস্তভাবে সৃষ্টি করে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। তিনি জমিনকে বিছানা এবং পর্বতরাজিকে পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন যাতে জমিন এদিক সেদিক সরে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। (সূরা নাবা : ৬-৭) আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষে ঘুরছে। আল্লাহ সেখানেও ভারসাম্য স্থাপন করেছেন যাতে তাদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি না হয়ে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। আকাশে সূর্য এবং ভূ-মণ্ডলে বরফের পাহাড় সৃষ্টি করে আল্লাহ ঠাণ্ডা ও গরমের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। বায়ুমণ্ডলও সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি করেছেন যাতে কোনো বিঘœ না ঘটে।
মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করে থাকেন এবং দেখেন আমরা তার কতটুকু অনুগত। সূরা মুলকের ২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’
সূরা রুমের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘জলে-স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল।’ অর্থাৎ- আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী এরূপ পরীক্ষা ও বিপদ-আপদ আসে মানুষের গোনাহের কারণে। তাই যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে বরং নিজের গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করা ও বেশি বেশি তাকে স্মরণ করা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিপর্যয় ও প্রতিকূল অবস্থায় রাসূল সা: খুব বিচলিত হয়ে পড়তেন এবং আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। এ সময় তিনি তাওবা-ইস্তেগফার-নামাজে মশগুল হতেন ও তার সাহাবাদেরও বেশি বেশি তা করার নির্দেশ দিতেন।

 

জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে দোয়া করে বলতেন:
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা’- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণটাই কামনা করি এবং এর অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ-৪/৩২৬ : ৫০৯৯)
গর্জনের সময় দোয়া করে বলতেন : ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা’দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খীফাতিহি’- পাক পবিত্র সেই মহান সত্তার প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠ করে বজ্র এবং ফেরেশতারা ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রা: যখন মেঘের গর্জন শুনতেন, তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কুরআনের উপরের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন।
ঝড়-বাতাসের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা পেতে দোয়া করতেন : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রীহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি। - হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি এর অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই , এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (বুখারি-৪/৭৬ : ৩২০৬ ও ৪৮২৯) ঝড়-তুফানের সময় কি আজান দেয়া যাবে
আমাদের দেশে প্রচলিত আছে ঝড়ের সময় আজান দিলে তার ক্ষয়ক্ষতি থেকে আল্লাহ সুরক্ষা দান করেন। তবে বিষয়টি সঠিক নয় যদিও যথাস্থানে আজান দেয়া ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন। হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে যে কথাটির প্রচলন তার কোনো ভিত্তি নেই; বরং নামাজে দাঁড়িয়ে, সেজদায় আল্লাহর কাছে দোয়া করাই মুমিনের কাজ। (দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া, নম্বর-১৬২৭৬৪)

ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার কারণ
১. যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন মহামারী আকারে (নতুন নতুন) প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
২. যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসিবত।
৩. আর যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি জমিনে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তবে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।


৪. যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তার রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। আর তারা (শাসকবর্গ মানুষের) সহায় সম্পদ কেড়ে নেয়।
৫. আর যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ)
উল্লিখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিসের দিকনির্দেশনা প্রমাণ করে যে, মানুষের গুনাহের কারণেই দুনিয়াতে বিভিন্ন রকম বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিপর্যয় কখনো সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জমিনে ঝড়-তুফান, অজানা মহামারী, রোগ-ব্যধি, অন্যায়ভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ তৈরি করে দেয়।

লেখকঃডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: