ভারতের নাগপুরে ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস প্রাইভেট লিমিটেডের ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রে প্রযুক্তি গবেষণা বিভাগে কর্মরত ছিলেন তরুণ বিজ্ঞানী নিশান্ত আগরওয়াল। এই কেন্দ্রে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হতো ভারতের অন্যতম সেরা সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ব্রহ্মস’। জল, স্থল, আকাশ এমনকি পানির নিচ থেকেও উৎক্ষেপণে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের অন্যতম সুরক্ষা হাতিয়ার।
গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে গোপন নানা তথ্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল নিশান্তকে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪ জুন সোমবার নিশান্ত আগরওয়ালকে ১৪ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন নাগপুরের জেলা আদালত। পাশাপাশি তাঁকে ৩ হাজার রুপি জরিমানাও করা হয়েছে।
আদালতের রায়ে বিচারক এমভি দেশপান্ডে জানান, আইটি আইন এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২৩৫-এর অধীনে নিশান্ত দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
২০১৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের সামরিক গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড একটি যৌথ অভিযানে নিশান্তকে গ্রেপ্তার করেছিল। এর আগে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রে টানা চার বছর কাজ করেছিলেন তিনি। সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দলেই কাজ করতেন। সে সময় জানা গিয়েছিল—নেহা শর্মা এবং পূজা রঞ্জন নামে দুটি ফেসবুক প্রোফাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন নিশান্ত। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন, ওই দুটি ফেক প্রোফাইলের আড়ালে ছিলেন পাকিস্তানি গোয়েন্দারা। ইসলামাবাদ থেকে আইএসআই এজেন্টরাই ওই প্রোফাইল দুটি চালাতেন।
ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিশান্তের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ব্রহ্মস অ্যারোস্পেসে নিশান্তকেই প্রথমবারের মতো গুপ্তচর হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি এই কাজ করতে পারেন, তা সহকর্মীরাও ভাবতেই পারেননি। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সেরা তরুণ বিজ্ঞানীর পুরস্কার জিতেছিলেন নিশান্ত। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পড়াশোনা করেছিলেন কুরুক্ষেত্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছিল, অনলাইনে কার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, সেই বিষয়ে উদাসীন ছিলেন নিশান্ত। এর ফলে সহজেই তিনি আইএসআই-এর লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিলেন।
ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস হলো ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডিফেন্স অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) এবং রাশিয়ার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসোর্টিয়ামের একটি যৌথ উদ্যোগ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: