বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ ‘আধুনিক দাসত্বের’ শিকার

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৫ মে ২০২৩ ০৯:২৫

বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ ‘আধুনিক দাসত্বের’ শিকার : সংগৃহীত ছবি বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ ‘আধুনিক দাসত্বের’ শিকার : সংগৃহীত ছবি

 

দাসত্বের যুগ শেষ। বই-পুস্তকে বড় বড় হরফে কথাটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও বাস্তবতা একেবারেই আলাদা। বিশ্বে এখনো বেশ দাপটের সঙ্গে চলছে দাসত্ব। শুধু বলার ঢংয়ে খানিকা রং বদলেছে মাত্র! প্রতি বছরের মতো এবারও সেই হুঁশিয়ারিই দিল অস্ট্রেলিয়া ভিত্তি মানবাধিকার সংস্থা ওয়ার্ক ফ্রি ফাউন্ডেশন।

২৪ মে, বুধবার মানবাধিকার সংগঠন ওয়ার্ক ফ্রি বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক ২০২৩ (গ্লোবাল স্ল্যাভারি ইনডেক্স) প্রকাশ করে। সূচক অনুসারে বিশ্বের প্রায় পাঁচ কোটি নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষ ‘আধুনিক দাসত্বের’ শিকার। 

সংস্থাটি বলছে, পাঁচ বছর আগের তুলনায় এটি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিড মহামারী এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে। কারণ, মহামারীতে অনেক শ্রমিকের পরিস্থিতি ও ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সশস্ত্র সংঘাতে চাকরির বাজার, শিক্ষা, হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা এবং জোরপূর্বক ও অনিরাপদে দেশান্তর বেড়েছে নজিরবিহীন ভাবে। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী ও শিশুরা। বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার প্রতি পাঁচজনের একজনই শিশু। এর মধ্যে অর্ধেক বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে আধুনিক দাসত্বের একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আধুনিক দাসত্বের আওতায় রয়েছে জোরপূর্বক শ্রম অথবা জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা, বাণিজ্যিকভাবে যৌনকাজে ব্যবহার, মানব পাচারের শিকার লোকজন, তাদের সঙ্গে দাসদের মতো আচরণ করা এবং শিশুদের বিক্রি করা।

সূচকের তথ্যানুযায়ী, ২ কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা এবং ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অভিবাসী শ্রমিকেরা অ-অভিবাসী প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের তুলনায় জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে তিন গুণ বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে-২০১৬ সালের তুলনায় আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা এক কোটি আরো বেড়েছে।

এই সূচক অনুসারে, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া ও মৌরিতানিয়া এই তিন দেশ শীর্ষে। রয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে এ সূচক প্রকাশ করা হয়েছিল। এর পাঁচ বছর পর ২০২১ সালে প্রকাশিত সূচকে আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা ১ কোটির বেশি বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তালিকার শীর্ষে রয়েছে কর্তৃত্ববাদী উত্তর কোরিয়া। কোরিয়ায় প্রতি হাজারে কমপক্ষে ১০৫ জন মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার। দ্বিতীয় স্থানে আছে আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া। সেখানে এক হাজার মানুষের মধ্যে ৯০ জনের বেশি মানুষ দাসত্বের শিকার। অপর দিকে তৃতীয় স্থানে থাকা আফ্রিকার আরেকটি দেশ মৌরিতানিয়ায় প্রতি হাজারে ৩২ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত তালিকার শীর্ষ ১০-এ আছে। এসব দেশে আইন করে প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার সীমিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ ১০-এ আছে তুরস্ক, রাশিয়া, তাজিকিস্তান ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নাম।

শীর্ষ অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোতে বিভিন্নভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের সংখ্যাও অনেক বেশী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভারতে এক কোটি ১০ লাখ, চীনে ৫০ লাখ ও রাশিয়ায় ১৮ লাখ মানুষ নিপীড়িত হচ্ছে।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: