কাশ্মীরে জাফরান বাঁচাতে বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২০ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪০

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

বিরিয়ানি-কোরমার মতো অনেক পদই জাফরানের ছোঁয়ায় বিশেষ রং ও গন্ধে বাড়তি মাত্রা পায়৷ অত্যন্ত দামী সেই উপকরণের ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে৷ কাশ্মীরের বিজ্ঞানীরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন৷

যতদূর চোখ যায়, উজ্জ্বল বেগুনি রংয়ের সম্ভার৷ কাশ্মীরের পাম্পোর গোটা বিশ্বে জাফরানের শহর হিসেবে পরিচিত৷ সেখানে ‘জাফরান ক্রোকাস' বা আঁশ প্রায় ৩০,০০০ পরিবারের আয়ের উৎস৷ বহু প্রজন্ম থেকে সেই ঐতিহ্য চলে আসছে৷

ফিরোজ আহমাদের পরিবারও সেই কাজ করে৷ শরৎকালে ক্রোকাস ফসল তোলার সময়ে তাঁর ছোট মেয়েও সাহায্য করে৷ ফিরোজও নিজের বাবা-মাকে সেই কাজে সাহায্য করতেন৷ কিন্তু তিনি ‘কেসর' নামে পরিচিত জাফরানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আজ উদ্বিগ্ন।

ফিরোজ বলেন, ‘‘২০০৩, ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী এক কানাল বা শূন্য দশমিক এক দুই একর জমি থেকে এক কিলো কেসর পাওয়া যেতো৷ আর এখন এক কিলো পেতে ১৫ কানাল জমি লাগে৷ ফলে বুঝতে পারছেন, বিগত বছরগুলিতে কতটা অবনতি ঘটেছে৷''

একই পরিমাণ জাফরান উৎপাদন করতে আরো বেশি জমির প্রয়োজন পড়ছে৷ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনেও সে বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে৷

গবেষক হিসেবে নাশিমান আশরফ কাশ্মীরে জাফরানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ সেই পাহাড়ি এলাকায় এই মশলা শুধু কোনো সাংস্কৃতিক সম্পদ নয়, মানুষের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসও বটে৷ ড. আশরফ বলেন, ‘‘গত ১৩ বছর ধরে আমি স্যাফরন বায়োলজির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছি৷ চাষিদের ফিডব্যাক অনুযায়ী জাফরান উৎপাদনের অবনতির তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে৷ প্রথমত উচ্চ মানের রোপণের উপাদানের অভাব রয়েছে৷ দ্বিতীয় কারণ কর্ম-রট রোগ৷ তৃতীয় কারণ সেচের ব্যবস্থার অভাব৷''

দশ বছরেরও বেশি আগে তিনি এক বড় জিন তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টি করেছিলেন৷ তাতে ৬০,০০০-এরও বেশি জাফরান ক্রোকাসের সিকুয়েন্স জমা রয়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে, এমন গাছ সৃষ্টি করাই সেই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ ড. নাশিমান আশরফ জানান, ‘‘আমরা জিনগুলি শনাক্ত করেছি৷ এখন আমরা উন্নত স্মার্ট জাফরান সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালাচ্ছি৷ খরা এবং অন্যান্য অ্যাবায়োটিক চাপ সামলাতে এবং কম রট রোগও প্রতিরোধ করতে পারবে সেই জাফরান৷''

ইরানের পর ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাফরান উৎপাদনকারী দেশ৷ ফুলের মধ্য থেকে জাফরানের উপকরণ বার করার জন্য অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজন৷ এক কিলো খাঁটি জাফরান পেতে হলে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুলের প্রয়োজন হয়৷ সে কারণে জাফরানের আকাশছোঁয়া দাম৷ এক কিলোর দাম প্রায় দুই হাজার ইউরো হতে পারে৷

নাশিমান আশরফ কাশ্মীরের উত্তরে ইয়ারিখাহ তাংমার্গ অঞ্চল পরিদর্শন করছেন৷ তাঁর টিম সেখানকার খেতের জন্য ল্যাবে ক্রোকাস টিউবার চাষ করেছে৷ সেগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে সক্ষম৷

এবার দীর্ঘ খরা বা আচমকা প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটলেও সেই গাছ টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে এই গাছ কুখ্যাত ‘কর্ম রট' প্রতিরোধ করতে পারবে৷ ড. আশরফ বলেন, ‘‘আমরা দশটি জেলাতেই সফলভাবে জাফরান চাষ করতে পারি৷ তবে এবার আমরা সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারণের কথা ভেবেছি৷ আমরা এখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে জম্মুতে আমাদের স্থাপনায় সেগুলির মান বিশ্লেষণ করবো৷ এখানে উৎপাদিত জাফরানের মধ্যে খাঁটি জাফরানের সমান পরিমাণ কম্পাউন্ড আছে কিনা, তা পরীক্ষা করবো।''

এখানে বহুকাল কোনো জাফরান চাষ হয় নি৷ কিন্তু জলবায়ু-প্রতিরোধী নতুন ফুলগুলি কিন্তু ভালোভাবে বেড়ে উঠছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: