প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত ও দ্রুত পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য শক্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে প্রযুক্তি।
আগামী ১০ বছরে প্রযুক্তি কীভাবে মানুষের জীবন ও পরিবেশকে প্রভাবিত করবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। তবে কিছুটা ধারণা করাই যায়। আগামী দশকে যে সম্ভাব্য যে ১০টি প্রযুক্তি পৃথিবী বদলে দিতে সাহায্য করবে তা তুলে ধরা হল।
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) : এআই আর সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় সীমাবদ্ধ নেই, মানুষের জীবনকে ঘিরে রয়েছে। আগামী দশকে এআই বিশ্বের প্রতিটি দিককে স্পর্শ করবে। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ব্যক্তিগতকৃত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষায়, উন্নত কাস্টমার সার্ভিস থেকে শুরু করে স্মার্ট হোম পর্যন্ত এর বিস্তার দেখা যাবে।
পিডব্লিউসির জরিপ অনুসারে, ২০২০ সালের মধ্যে এআই বিশ্ব অর্থনীতিতে ১৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২. ৫জি নেটওয়ার্ক : যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে ৫জি নেটওয়ার্ক। স্মার্ট শহর, দূরবর্তী সার্জারি ও অগমেন্টেড রিয়্যালিটির (কম্পিউটার নির্মিত বাস্তব জগতের ত্রিমাত্রিক চিত্র) উন্নত অভিজ্ঞতা দেবে এই ৫জি নেটওয়ার্কের দ্রুত গতির ও কম লেটেন্সির (কল বার বার আটকিয়ের যাওয়া) ইন্টারনেট সেবা।
৩. টেকসই ও সবুজ প্রযুক্তি : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সবুজ প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। যেমন বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য শক্তি ও দক্ষ ডেটা সেন্টার।
গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়, এটি পরবর্তী সাত বছরে বার্ষিক ১৭ দশমিক ২ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
৪. ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিবর্তে ব্লকচেইন : যদিও ব্লকচেইনকে প্রায়শই বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির সমার্থক বলে মনে করা হয়, তবে এর সম্ভাবনা তার থেকে অনেক বেশি বিস্তৃত।
ব্লকচেইন একধরনের ডিজিটাল লেজার প্রযুক্তি যা তথ্য সংরক্ষণ করে, বিশেষ করে লেনদেনের তথ্য। অনেকগুলো ব্লকে একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে ব্লকের একটি শিকল তৈরি করাই হচ্ছে ব্লকচেইন। যে ব্লকগুলো দ্বারা এই চেইন তৈরি করা হয় সেই ব্লকগুলোতে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। তাই এটি সহজে হ্যাকিং করা যায় না।
আগামী দশকের মধ্যে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যাংকিংয়ের মতো শিল্পে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫. এজ কম্পিউটিং : এজ কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে শুধুমাত্র দূরবর্তী ডেটা সেন্টারের ওপর নির্ভর করতে হবে না।, যেখানে প্রয়োজন তার কাছাকাছি ডেটা প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয়। আইওটি (স্মার্ট ফ্রিজ ও এসির মতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহৃত প্রযুক্তি) ডিভাইস, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন থেকে শুরু করে স্মার্ট শহর, স্বাস্থ্যসেবার অ্যাপ্লিকেশনগুলোর বিলম্ব কমাতে ও রিয়েল টাইম বা লাইভ সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই পদ্ধতি সাহায্য করবে।
৬. মেটাভার্স : মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে ব্যবহারকারীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এই প্রযুক্তি খুব দ্রুত উন্নত হচ্ছে। মেটার মতো কোম্পানিগুলো এই জায়গায় প্রচুর বিনিয়োগ করছে। অদূর ভবিষ্যতে কীভাবে সামাজিককরণ হবে, কীভাবে ভার্চুয়াল জগতে মানুষ একসঙ্গে কাজ করবে, তার সম্ভাবনা তুলে ধরছে এই মেটাভার্স প্রযুক্তি।
৭. জৈবপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা : পরবর্তী দশকে জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি ও স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী অগ্রগতি হবে। সম্প্রতি মানুষের মস্তিষ্কে প্রথমবারের মতো চিপ স্থাপন করেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। স্বাস্থ্যসেবায় এই ধরনের আরো উদ্যোগ দেখা যাবে। নির্ভুল ওষুধ, জিন সম্পাদনা ও টেলিমেডিসিন এর কয়েকটি উদাহরণ। গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেলিমেডিসিন বাজারের মূল্য ৩৮ হাজার ৩০ কোটি ডলার হবে।
৮. সাইবার নিরাপত্তা : ক্রমবর্ধমান ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে সঙ্গে, শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। সাইবার আক্রমণ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। তাই বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চের প্রতিবেদন বলছেন ২০৩০ সাল নাগাদ, এর বাজার মূল্য ৪৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হতে পারে।
৯. মহাকাশ গবেষণা : মহাকাশ গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে স্পেসএক্স ও ব্লু অরিজিনের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো। মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর মতো মিশন ও বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণের সাক্ষী হতে পারে পরবর্তী দশক। এর ফলে পৃথিবীর বাইরেও অন্য গ্রহে মানুষের বসবাসের সম্ভাবনার নতুন যুগের সূচনা করবে।
১০. দূরবর্তী শিক্ষা : কোভিড-১৯ মহামারি দূরবর্তী শিক্ষার প্রযুক্তি ত্বরান্বিত করেছে। এমনকি মহামারি কমে গেলেও এর প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেখার গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধন হয়েছে। এছাড়া নতুন কিছু শিখার আগ্রহ মেটায় অনলাইন কোর্স। এর ফলে দেশে বা স্থান কোনো বাধা হবে না। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই শেখা যাবে। মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে।
ভবিষ্যতে মানুষের লেনদেন, যোগাযোগ, কাজ, ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যসেবা কেমন হবে, তার একটি চিত্র প্রযুক্তির এসব প্রবণতা তুলে ধরে। তাই আধুনিক প্রযুক্তির স্রোতে খাপ খাওয়াতে মানুষের দক্ষতার উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
তথ্যসূত্র: অন্ট্রাপ্রেনার
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: