মৃত সাগর : যে জলে কেউ ডোবে না

Israt Jahan | ১২ মে ২০২৩ ২০:২২

সংগৃহিত ছবি সংগৃহিত ছবি


এই বিশ্বে রহস্যের যেনো শেষ নেই। প্রকৃতির খেয়ালেই চলছে সবকিছু। মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত একটি রহস্যের নাম মৃত সাগর। সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ। মৃত সাগরের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে জর্ডান এবং পশ্চিম সীমান্তে যথাক্রমে ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন।

ইতিহাস খ্যাত ‘মৃত সাগর’। ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডেড সি’ (Dead Sea) এবং আরবদের কাছে তা ‘বাহরুল মায়্যিত’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর আগে এ সাগরের উৎপত্তি।

ডেড সি বা মৃত সাগরের দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এ সাগরের পশ্চিমে রয়েছে ইসরায়েল ও পূর্বে জর্দান। এখান থেকে পবিত্র জেরুজালেম নগরীর দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল।

মৃত সাগর নানা বিচিত্র খনিজ পদার্থে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, সালফার, ব্রোমাইন ও কলগেন রয়েছে। মৃত সাগরের পানিতে ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) পরিমাণ যথাক্রমে ৫০.৮ ও ৩০.৪ শতাংশ। এ সাগরের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৩৩.৭ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য সাগর ও মহাসাগরের তুলনায় লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় মৃত সাগরে কোনো মাছ জন্মায় না। জর্দান নদী থেকে মাছ এই নদীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে রয়েছে বিপুল ব্যাকটেরিয়া (Microbe) এবং ক্ষুদ্রকায় ছত্রাক (Encyclopadia Encarta, Chapter-Dead Sea)।

এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির থেকে অনেক ভারি। আর তা এতটাই ভারী যে মানুষের দেহ তার চেয়ে হাল্কা। তাই এখানে কেউ চেষ্টা করলেও ডুবতে পারে না।

প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়। এই সাগরের অদ্ভূত বিষয় হল কেউ ডুবতে চাইলেও এখানে ডুবতে পারে না। সাঁতার না জানা মানুষও ভেসে থাকে।

এছাড়া এই মৃত সাগরের জলে লবণের পরিমাণ এতটাই বেশি যে কোনও মাছ বা জলজ প্রাণিও দেখা যায় না। বলা চলে কোনও প্রাণ সৃষ্টির উপযোগী নয়। সেই কারণেই এর নাম ডেড সি। তবে এখানে পর্যটকরা যায়। এবং সেখানে অদ্ভুতভাবে ভেসে থাকার ছবি সামনে আসে। বৈজ্ঞানিক কারণ থাকলেও এই সাগর অবাক করে সকলকেই।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সমকামিতার মতো জঘন্য পাপ ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে সডম ও গোমাররাহ নামের লোকালয় মহান আল্লাহর হুকুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটি বর্তমানে মৃত সাগর নামে পরিচিত।

আল্লাহর নবী হজরত লুত (আ.)-এর বারবার সাবধান বাণী সত্ত্বেও সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবৈধ যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার অভ্যাস পরিত্যাগ করেনি। পৃথিবীর বুকে একমাত্র তারাই যৌন ক্ষুধা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের ওপর উপগত হতো।কোরআনুল কারিমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে এই ঘটনা বিধৃত হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি লুতকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের আগে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কামতৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন করো, তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’

                                                                                        (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮০-৮১)

ফলে শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাআলা এ জনপদের চার লাখ মানুষকে বাস্তুভিটাসহ বিধ্বস্ত করে দেন। বর্তমান বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী স্কলার মুফতি তাকি উসমানি মৃত সাগর পরিদর্শনের পর লেখেন, ‘আমেরিকার বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলদেশে খননকার্য চালিয়ে মানুষের ব্যবহার্য পাথরের ঘটি, বাটি, চামচ উদ্ধার করেন। বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পর্যটক প্রতিদিন মৃত সাগর দেখার জন্য আসে এবং শিক্ষা গ্রহণ না করে বিনোদন ও ফুর্তিতে মেতে ওঠে।’ (মুফতি তাকি উসমানি, জাহানে দিদাহ, মৃত সাগর অধ্যায়)।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের ব্যাপারে যেটা সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হলো লুত সম্প্রদায়ের অনুরূপ পাপাচার। আমার উম্মতের কিছু লোক লুত জাতির অপকর্মে লিপ্ত হবে। যখন এরূপ হতে দেখবে তখন তাদের ওপরও অনুরূপ আজাব অবতরণের অপেক্ষা কোরো।’

অনৈতিক যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার শাস্তিস্বরূপ সাম্প্রতিককালে দেখা দিয়েছে এইডস বা এইচআইভি। ‘এইডস’ মানে নিশ্চিত মৃত্যু। আজ পর্যন্ত এর কোনো কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।

২০১৭ সাল পর্যন্ত এইডসে আক্রান্ত হয়ে তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ। এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধ যৌনমিলন ও সমকামিতা।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, কোনো জাতির মধ্যে যদি অবৈধ ও বিকৃত যৌনাচারের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তখন আল্লাহ তাআলা লুত সম্প্রদায়ের মতো বা এর চেয়ে আরো ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করেন।

১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. হিরোশি নাকাজিমার মন্তব্য এই ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য : ‘সাধারণ জনগণের মধ্যে এইডসের বিস্তারের ফলে কিছু জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এমনকি সমগ্র মানবজাতিও বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।’ (The New Straits Times, Kuala Lampur, Malaysia, June 23, 1988)।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: