পৃথিবীতে ফিরছে নাসার অনুসন্ধান যান ওসিরিস-রেক্স

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৯

নাসার অনুসন্ধান যান ওসিরিস-রেক্স : সংগৃহীত ছবি নাসার অনুসন্ধান যান ওসিরিস-রেক্স : সংগৃহীত ছবি


দারুণ এক চালান নিয়ে পৃথিবীতে ফিরছে নাসার অনুসন্ধান যান ওসিরিস-রেক্স। রাইফেলের বুলেটের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে এটি। তবে ওসিরিসের গতি নয়, বরং যে বস্তুটি সে বহন করছে আসল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটাই। ওসিরিস দূর মহাকাশের এক গ্রহাণুর বুক থেকে তুলে আনছে ‘মাটির’ নমুনা।

বেন্নু নামের গ্রহাণুটির আকার একটি পাহাড়ের সমান। কোদালের কোপের মতো করে তার পৃষ্ঠ থেকে কয়েক খাবলা ধুলা তুলে এনেছে ওসিরিসের এক যান্ত্রিক হাত। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণের উৎস কী, বিজ্ঞানীদের সেই গভীরতম প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে ওই ধুলা থেকে। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত দান্তে লরেত্তা বলেন, ‘উপাদানগুলো পৃথিবী তৈরির আগের।

তার মধ্যে কিছু নমুনা থাকতে পারে, যা এমনকি আমাদের সৌরজগতেরও আগের।’ পৃথিবী কিভাবে গঠিত হলো, কেন এটি প্রাণের বসবাসযোগ্য, আবহমণ্ডলের বায়ু বা মহাসাগরের পানি কোথা থেকে এলো এবং সর্বোপরি পৃথিবীর সব প্রাণ গঠনে প্রয়োজনীয় জৈব অণুর উৎস কী—এসব জটিল প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে আড়াই শ গ্রাম ওজনের ওই ধুলা থেকে। বিজ্ঞানীদের বিদ্যমান ধারণা হলো, প্রাণের জন্য সহায়ক উপাদানগুলোর অনেকই পৃথিবীর আদিকালের দিকে মহাকাশ থেকে ছুটে এসে আছড়ে পড়া গ্রহাণু থেকে পাওয়া। তার মধ্যে অনেকই হয়তো বেন্নুর মতো।

নাসা বেন্নু থেকে নমুনা সংগ্রহের অভিযান শুরু করে ২০১৬ সালে। ৫০০ মিটার চওড়া কাঠামোটিতে পৌঁছতে ওসিরিসের লাগে দুই বছর। আরো দুই বছর লাগে নমুনা সংগ্রহের সঠিক স্থান বাছাই করতে। সাত বছরে যেতে-আসতে অনুসন্ধান যানটি ভ্রমণ করেছে ৭০০ কোটি কিলোমিটার পথ। নমুনা সংগ্রহের মুহূর্তটি ছিল চমকে দেওয়ার মতো।

তিন মিটার দীর্ঘ হাতটি ওসিরিসের মাটিতে রাখতেই সেখানকার উপাদান তরল পদার্থের মতো ভাগ হয়ে যায়। নাসার ক্যাপসুলটি রবিবার ইউপি অঙ্গরাজ্যের মরুভূমিতে অবতরণের পর উপাদানগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতি এর মধ্যে সারা। টেক্সাসের জনসন স্পেস সেন্টারে এরই মধ্যে একটি বিশেষ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।

বেন্নুতে সম্ভবত প্রচুর পানি রয়েছে। তা আছে এর খনিজ উপাদানের মধ্যে। এর পরিমাণ হতে পারে গ্রহাণুটির ওজনের ১০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন এর বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোজেন অণুর অনুপাত পৃথিবীর সাগরের পানির মতোই কি না। পৃথিবীর শুরুর দিকের অতি তাপের জন্য বেশির ভাগ পানিই শুকিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এখন যদি দেখা যায় বেন্নু ও পৃথিবীর পানির ধরন এক, তাহলে এ ধারণাটা জোরদার হবে যে পরবর্তীকালে এসে আছড়ে পড়া গ্রহাণুই পৃথিবীর পানির উৎস।

বেন্নুতে সম্ভবত এর ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ কার্বনও আছে। আর এ বিষয়টিও খুব কৌতূহলকর। জানা মতে পৃথিবীর প্রাণ জৈব রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। তাহলে কি নবীন পৃথিবীতে জীবনের জাগরণের জন্য পানির পাশাপাশি জটিল অণুও মহাকাশ থেকে আসতে হয়েছিল? বেন্নু হয়তো এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে অনেকটাই সাহায্য করবে।


সূত্র : বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: