হানি ট্র্যাপ : সম্মান হরণের আরেক ফাঁদ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


মহান আল্লাহ স্বভাবগতভাবে মানুষকে যে জিনিসগুলোর প্রতি দুর্বল করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নারী। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালোবাসা—নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রুপা, চিহ্নিত (চিত্তাকর্ষক) ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪)

তাই নবীজি (সা.) উম্মতকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.)-এর সনদে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, অবশ্যই দুনিয়াটা চাকচিক্যময় মিষ্টি ফলের মতো আকর্ষণীয়। আল্লাহ তাআলা সেখানে তোমাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করছেন যে তোমরা কিভাবে কাজ করো? তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনি ইসরাঈলের মাঝে প্রথম ফিতনা নারীকেন্দ্রিক ছিল।’  (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৪১)

হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, হাজার বছর আগেও নারীকেন্দ্রিক ফাঁদে ফেলে মানুষকে বিপদে ফেলা হতো। বর্তমান বিশ্বেও ‘হানি ট্র্যাপ’ বলে একটা পরিভাষা প্রচলিত আছে, যা সুন্দরী নারীদের দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে স্বার্থ হাসিল করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই হাতিয়ার ব্যবহার করে বিশ্বের বহু নামিদামি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথিসহ, অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতা ইত্যাদি ছিনিয়ে নেওয়ার নজির পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করে এখন স্থানীয় পর্যায়েও মানুষের অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এক শ্রেণির প্রতারক জাল বিছিয়ে রেখেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারা সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে তাদের টার্গেটেড ব্যক্তির সঙ্গে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব ও কথোপকথন, তারপর ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতায় লিপ্ত করে। সেই আলাপচারিতার ভিডিও চিত্র সম্পাদনা করে নানাভাবে প্রতারণা এবং দীর্ঘমেয়াদে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে একান্তে আলাপচারিতার প্রলোভন দেখিয়ে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে তাদের জিম্মি করেও অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেয়। আতঙ্ক সৃষ্টি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে হাজির করে ভুয়া পুলিশ ও ভুয়া সাংবাদিক ইত্যাদি।

তাদের এমন প্রলোভনের শিকার হন ধনাঢ্য ও খ্যাতনামা ব্যক্তিরা। মান-সম্মানের কথা ভেবে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতেও রাজি হয় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও কোনো অভিযোগ করে না।

পাপের এই মোহে একদিকে তাদের সম্পদ যেমন হারাতে হয়, তেমনি ব্যভিচারের মতো জঘন্য অপরাধের প্রবণতা তাদের ঈমান-আমলকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।

তাকওয়া অবলম্বন করা : কেউ যদি প্রকৃত পক্ষে আল্লাহকে ভয় করে, তাহলে সে কখনো এমন ফাঁদে পা দেবে না। মহান আল্লাহই তাকে এই ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ বাতলে দেবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেই মহিলা তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল আর সে (ইউসুফ)ও তার প্রতি আসক্ত হয়েই যেত যদি সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন না দেখত। আমি তা দেখিয়েছিলাম তাকে অসৎ কর্ম ও নির্লজ্জতা থেকে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, সে ছিল বিশুদ্ধ-হৃদয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ২৪)

কোরআনের নির্দেশনা মেনে চলা : অর্থাৎ পর্দার বিধান মানার মাধ্যমে নিজেকে সংযত রাখা, এটা মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা : এ ধরনের ফাঁদগুলো পাতা হয় সাধারণত ব্যভিচারের প্রলোভন দেখিয়ে। যে ব্যক্তি এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে, আল্লাহকে ভয় করবে, তাকে এই পন্থায় বিপথগামী করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ৩২)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের জেনা (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের জেনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের জেনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের জেনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জেনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের জেনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)

কোরআন-হাদিসের এই নির্দেশনাগুলো যদি কোনো মুমিন অনুসরণ করে, তাহলে তাকে ‘হানি ট্র্যাপ’-এর মতো ফাঁদে ফেলে বিপদে ফেলা যাবে না। মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের ফাঁদ থেকে রক্ষা করুন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: