কাবুল থেকেও দেড়গুণ বড় ‘নিউ কাবুল সিটি’ নির্মাণ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তান

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪১

নিউ কাবুল সিটি’ নির্মাণ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তান : সংগৃহীত ছবি নিউ কাবুল সিটি’ নির্মাণ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তান : সংগৃহীত ছবি


কাবুল থেকেও দেড়গুণ বড় ‘নিউ কাবুল সিটি’ নামে নতুন একটি শহর নির্মাণ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। গত ১৭ আগস্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান খাওর-এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দেশটির আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।

চুক্তি সাক্ষরের পর নতুন এই শহর নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গণী বারাদার ও মাওলানা আব্দুস সালাম হানাফি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকী, ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শের মুহাম্মদ আব্বাস স্তানাকজাই ও আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মাওলানা হামদুল্লাহ নোমানী।

তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট ‘নিউ কাবুল সিটি’ রাজধানী কাবুলের উত্তরের জেলা দাহ সাব্‌জ, শুকার্‌দারাহ, কারাহ্‌-বাগ, সিটাফ, কাল্‌কান ও পারওয়ান প্রদেশের বাগরাম জেলার বারিকে আ’ব অঞ্চলের বিশাল এলাকা নিয়ে নির্মাণ হতে যাচ্ছে।

৭৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বা ১ লক্ষ ৮৫ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠবে আফগানিস্তানের নতুন এই শহর। যা আয়তনে রাজধানী কাবুল থেকেও প্রায় দেড়গুণ বড়।

৩ ধাপে এই মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপে রাখা হয়েছে বিভিন্ন অংশ। প্রথম ধাপের প্রধান লক্ষ্য হলো, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৫ লক্ষাধিক লোকের জন্য ৮০ হাজার বাসভবন তৈরি করা।

সম্প্রতি প্রকল্প উদ্বোধন কালে ১ম ধাপের ২য় অংশের কাজেরও উদ্বোধন করা হয়। এর লক্ষ্য হলো, প্রথমে ৭৪০ একর জমির উপর ১২ হাজার মানুষের জন্য ২ হাজার ৩শটি বাসভবন নির্মাণ করা।

আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মাওলানা হামদুল্লাহ নোমানী জানিয়েছেন, নিউ কাবুল সিটি গড়ে তুলতে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।

‘নিউ কাবুল সিটি’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৫ সালে আমেরিকার মদদপুষ্ট হামিদ কারজাই সরকারের আমলে। ১২ হাজার একর জমিতে কাজ শুরুর মাধ্যমে প্রকল্পটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এমনকি আফগান, ফরাসি ও জার্মান প্রকৌশলীরা শহরটি গড়ে তোলার মাস্টারপ্ল্যানও তৈরি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, মালিকানা জটিলতা ও বিভিন্ন নীতির কারণে এই প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি। দাহ সাবজ জেলার জমির মালিকরা হামিদ কারজাইয়ের সরকারকে জমি দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রকল্পটি পরিকল্পনাতেই থেমে যায়।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালে হামিদ কারজাইয়ের সরকার আবার প্রকল্পটি শুরু করার উদ্যোগ নেয়। এসময় সরকার ভূমি নীতি পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট জমিগুলোকে সরকারি খাস জমি হিসেবে ঘোষণা দেয়। এতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ও জমি মালিকরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এই ঘটনায় প্রশাসনের সাথে সংঘর্ষে ৭ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়।

আমেরিকার মদদপুষ্ট নতুন সরকার আশরাফ গনী ক্ষমতায় আসার পর ৩য় বারের মতো এর কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেন তৎকালীন আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মাহমুদ কারজাই। তিনি জমি মালিকদের এই প্রকল্পের আংশিক মালিকানা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। সে পরিকল্পনাও আলোর মুখ দেখতে পায়নি।

তালেবানের নেতৃত্বাধীন সরকারের আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মাওলানা হামদুল্লাহ নোমানী বলেন, এক বছর আগেই এই প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন হয়ে যেতো। কিন্তু মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে প্রায় ১ বছর পর শুরু করতে হয়েছে আমাদের।

তিনি জানান, তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুল বিজয়ের পর দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে। এর আওয়তায় ২০২২ সালে ‘নিউ কাবুল সিটি’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করতে গিয়ে প্রকল্পের কাজ ৮ মাসের মতো পিছিয়ে গেছে।

মাওলানা হামদুল্লাহ নোমানী বলেন, আমরা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জমির সকল নথিপত্র সংগ্রহ করে জমি দখল প্রতিরোধ কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেই। তারা পর্যালোচনার পর দেখতে পান যে, অনেক সরকারি খাস জমি অন্যরা দখলে নিয়ে রেখেছে। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিগুলোতেও ছিলো মালিকানা নিয়ে জটিলতা। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিগুলোর অধিকাংশই ছিলো বিরোধপূর্ণ। তারা সব ধরণের সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারি খাস জমিকে প্রথমে দখলমুক্ত করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর প্রকল্পের অঞ্চলে থাকা অন্যান্য জমিগুলোর বিরোধ নিষ্পত্তি করে প্রকৃত মালিককে তার মালিকানা বুঝিয়ে দিয়েছে। এতে করে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। প্রকৃত মালিকেরা তাদের জমি বুঝে পাওয়ায় স্বতস্ফূর্তভাবে নির্ধারিত বিনিময় নিয়ে জমি হস্তান্তরের মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: