জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে অ্যান্টার্কটিকার এম্পেরর প্রজাতির পেঙ্গুইন। এখন পর্যন্ত এ বিপর্যয়ে প্রায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। পানিতে সাঁতারোপযোগী জলরোধী (ওয়াটারপ্রুফ) পালক গজাবার আগেই পেঙ্গুইনের ছোট ছোট ছানাগুলোর পায়ের নিচে বরফ গলতে শুরু করে এবং তারা বরফ-ঠাণ্ডা পানিতে পড়ে যায়। পরে হয় পানিতে ডুবে নয়তো বরফে জমে পাখিগুলোর মৃত্যু হয়। খবর বিবিসির।
বিজ্ঞানীদের আশংকা, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে চলতি শতকের শেষ নাগাদ শতকরা ৯০ শতাংশেরও বেশি এম্পেরর পেঙ্গুইনের কলোনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে প্রজাতিটিকে বাঁচানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।
গত বছর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিমে, বেলিংশউসেন সাগরের সম্মুখভাগে অবাধে হাজারও পেঙ্গুইন মারা যাওয়ার ঘটনাটি উঠে আসে।
বিজ্ঞানীদের ভয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে চলতি শতকের শেষ নাগাদ শতকরা ৯০ শতাংশেরও বেশি এম্পেরর পেঙ্গুইনের কলোনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) ড. পিটার ফ্রেটওয়েল বলেন, "এই প্রজাতির পেঙ্গুইনেরা তাদের প্রজনন চক্রের জন্য সামুদ্রিক বরফের উপর নির্ভরশীল; এটি একটি দৃঢ় প্ল্যাটফর্মের মতো যা তারা তাদের বাচ্চাদের বিকাশে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই বরফ যদি যথেষ্ট বিস্তৃত না হয়, কিংবা দ্রুত গলে যায়- তবে পাখিরা বিপদে পড়ে যাবে।"
"এখনও আশা শেষ হয়ে যায়নি- আমরা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারি। আর যদি তাতে ব্যর্থ হই, তাহলে এই আইকনিক, সুন্দর পাখিগুলোকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাব আমরা", যোগ করেন তিনি।
ড. ফ্রেটওয়েল এবং তার সহকর্মীরা 'কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট' জার্নালে ২০২২ সালে পেঙ্গুইনের এমন পরিণতির প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞানীরা বেলিংশউসেন সাগরের নিকট পাঁচটি কলোনী ট্র্যাক করেছেন- রথসচাইল্ড আইল্যান্ড, ভার্ডি ইনলেট, স্মাইলি আইল্যান্ড, ব্রায়ান পেনিনসুলা এবং ফ্রগনার পয়েন্ট।
ইইউ'র সেন্টিনেল-২ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে, তারা পেঙ্গুইনের সব ধরনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন।
মার্চের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধে শীত আসার সাথে সাথে প্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা সামুদ্রিক বরফে ঝাঁপ দেয়। সেখানে তারা মিলিত হয়, ডিম পাড়ে, ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করে এবং বাচ্চারা পরিপক্ক হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের দেখাশোনা করে। ডিসেম্বর বা জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে নতুন পাখিরা সমুদ্রে চলে যায়। কিন্তু গবেষণা দলটি নভেম্বরে দেখতে পায়, ছানাগুলোর সাঁতারের জন্য প্রয়োজনীয় পালক গজানোর আগেই সামুদ্রিক বরফের চাঁই ভাঙতে শুরু করেছিল।
পাঁচটির মধ্যে চারটি কলোনিতেই প্রজনন ব্যর্থ হয়; শুধুমাত্র উত্তরের রথসচাইল্ড আইল্যান্ডে কিছুটা ফলপ্রসূ হয়। ২০১৬ সালের গ্রীষ্ম থেকেই অ্যান্টার্কটিকার বরফ তীব্র বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।
২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ দুই গ্রীষ্মে রেকর্ড হারে বরফ গলেছে; বলা যায়, বেলিংশউসেন সাগর একপ্রকার বরফের আবরণ বিবর্জিত ছিল।
অন্যদিকে পৃথিবীর আরেক প্রান্ত, আর্কটিক অঞ্চলেও গত এক দশকে সামুদ্রিক বরফ রেকর্ড হারে গলছে। অ্যান্টার্কটিক বরফের বিশেষজ্ঞ ড. ক্যারোলিন হোমস নিউজকে বলেন, "আমরা এখন যা দেখছি তার সাথে আগের ঘটনার বিস্তর ফারাক। আমরা পরিবর্তন আশা করেছিলাম কিন্তু তা যে এত দ্রুত হবে সেটি ভাবনায় ছিলো না।"
"আর্কটিকের ওপর বিভিন্ন স্টাডির মতে, জলবায়ু উষ্ণায়নকে যদি বিপরীত মুখে প্রবাহিত করা যায়, তাহলে উত্তর মেরুতে সমুদ্রের বরফ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এটি অ্যান্টার্কটিকেও প্রযোজ্য হবে নাকি, আমাদের জানা নেই। কিন্তু এটি মনে করার সব কারণ আছে যে, যথেষ্ট ঠাণ্ডা পেলে সমুদ্রের বরফ পুনর্গঠিত হবে।"
প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এম্পেরর পেঙ্গুইনদের 'বিলুপ্তের কাছাকাছি' হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।
তবে ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে তাদের জীবনযাত্রা ঝুঁকির মুখে পড়ায় এদের আরও 'ভালনারেবল' বিভাগে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: