মানুষ পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে, মুরগির হাড়েই রয়েছে প্রমাণ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১১ জুলাই ২০২৩ ০৯:১৫

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


যখন ভিনগ্রহীরা বা আমাদের পরবর্তী বংশধররা পৃথিবীর অতীতকে ব্যাখ্যা করার জন্য আজ থেকে পাঁচ লাখ বছর পর পলির স্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করবে, তখন তারা জীবনকে বদলে দেয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের অস্বাভাবিক প্রমাণ খুঁজে পাবে।

বিজ্ঞানীরা এই উপসংহারে পৌঁছাবেন যে, মানুষের ক্ষুধা এবং জীবনযাত্রার দ্রুত সম্প্রসারণ প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে আমূলে পরিবর্তন করেছে। যা পৃথিবীকে একটি নতুন ভূতাত্ত্বিক যুগ উপহার দিয়েছে যাকে অ্যানথ্রোপোসিন বা "মানুষের যুগ" বলা হয়।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের শিলাগুলোর মধ্যে নিচের সূক্ষ্ম সূত্র থাকবে:

- কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের আকস্মিক বৃদ্ধি,
- পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা থেকে তেজস্ক্রিয় ডেট্রিটাস,
- সর্বব্যাপী মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং এক আক্রমণাত্মক প্রজাতির বিস্তার লক্ষ্য করা যাবে।

এক্ষেত্রে মুরগির 'হাড়' সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালসের (পেটা) কর্মকর্তা ক্যারিস বেনেট বলেন, আধুনিক মুরগি তার পূর্বপুরুষ বা অন্য বন্যপ্রাণির তুলনায় অনেকটাই আলাদা।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক মুরগির দেহের আকার, কঙ্কালের আকৃতি, হাড়ের রসায়ন এবং জেনেটিক্স সবই আলাদা।

তার মতে, প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোতে মানুষের হস্তক্ষেপের প্রমাণ এটি।

আধুনিক ব্রয়লার মুরগির উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলে। লাল বনমোরগ (গ্যালাস গ্যালাস) প্রায় আট হাজার বছর আগে এখানেই প্রথম গৃহপালিত হয়েছিল। এই প্রজাতিটি দীর্ঘদিন ধরে এর মাংস এবং ডিমের জন্য প্রশংসিত হয়ে আসছে।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী সুপারমার্কেটগুলোতে পাওয়া গোলাকার ও স্বল্পস্থায়ী মুরগির প্রকৌশলী প্রজনন শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে।

লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওবায়োলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক জ্যান জালাসিউইচ এএফপিকে বলেন, বিবর্তন ঘটতে সাধারণত লাখ লাখ বছর সময় লাগে, কিন্তু এখানে এ প্রাণির একটি নতুন রূপ তৈরি করতে মাত্র কয়েক দশক সময় লেগেছে।

আরেকটি প্রমাণ হলো, ব্রয়লার মুরগির সর্বব্যাপী উপস্থিতি। পৃথিবীতে কার্যত যে জায়গায় মানুষ আছে, সেখানেই মানুষের প্রাণিজ প্রোটিনের প্রিয় উৎস অর্থাৎ মুরগির প্রচুর অবশেষও রয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৩ বিলিয়ন বা ৩৩০০ কোটি পাখি (উড়ন্ত) রয়েছে। অন্যদিকে গৃহপালিত মুরগির সংখ্য সব বন্য পাখির প্রজাতির চেয়ে তিনগুণ বেশি।

পাঞ্জাবের চিকেন টিক্কা, জাপানের ইয়াকিটোরি, সেনেগালে পুলেট ইয়াসা বা ম্যাকডোনাল্ডের নাগেটস সব যায়গায় পাওয়া যায়, প্রতিদিন অন্তত আড়াই কোটি মুরগিকে খাওয়ার জন্য হত্যা করা হয়। অনেক সমাজে গরু বা শুয়োরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হলেও, বিশ্বের প্রায় সকল সমাজ ও সংস্কৃতিতে মুরগির মাংস বৈধ।

বেনেট বলেন, আমাদের জীবমণ্ডল কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তার একটি প্রতীক হলো মুরগি এবং মানুষের প্রয়োজনে এ প্রাণিটি বারবার ব্যবহৃত হয়েছে।

তার মতে, বিশ্বব্যাপী বিপুল সংখ্যক মুরগির হাড় ছড়িয়ে রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডে একটি সুস্পষ্ট সংকেত রেখে যাবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: