যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে শাটডাউন তথা অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই শাটডাউনের কারণে বিপাকে পড়েছে সরকারি কর্মীরা। তাদের অনেককেই বেঁচে থাকার জন্য এখন ফুড ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের হায়াটসভিলে ফুড ব্যাংক থেকে বিনামূল্যে খাদ্য গ্রহণ করেন সরকারি কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
সিনহুয়ার প্রতিবেদন মতে, শাটডাউনের তিন সপ্তাহের মাথায় গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের হায়াটসভিলে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়। সেখানে সরকারি কর্মচারী ও ঠিকাদাররা খাদ্য সামগ্রী গ্রহণ করেন।
চলতি সপ্তাহ থেকে হায়াটসভিলে সরকারি কর্মচারী ও ঠিকাদারদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে অলাভজনক সংগঠন ক্যাপিটাল এরিয়া ফুড ব্যাংক।
সিএনবিসি নিউজের প্রতিবেদন মতে, খাদ্য বিতরণ শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগেই বিনামূল্যে খাদ্য নেয়ার জন্য অপেক্ষামান মানুষের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। এ সময় সরকারি কর্মীরা জানান, বেতন না পাওয়ায় তাদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু এরপরও তাদের নিয়মিত বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সিএনবিসি জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেদক লাইনে দাঁড়ানো অনেকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তখন কেউ কেউ লজ্জায় ক্যামেরার সামনে তাদের মুখ দেখাতে রাজি হয়েছিলেন, আবার কেউ কেউ রাজি হননি। একজন নারী সরকারি কর্মী বলেন, তিনি গত ২১ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এভাবে ফুড ব্যাংকের লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
ওই নারীর ভাষ্য, ‘আমি কখনও এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। আমি সেনাবাহিনীতে ২১ বছর ধরে কাজ করেছি। এরপর গত দুই বছর ধরে আমি একজন ফেডারেল সরকারি কর্মচারী। আমি এই চাকরি বেছে নিয়েছিলাম, কারণ এতে স্থিতিশীলতা ছিল। কিন্তু সেই স্থিতিশীলতা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।’
গত ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর শুরু হলেও বাজেট বিল পাস না হওয়ায় শুরু হয় সরকারের শাটডাউন। উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বিল পাস করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
গত বুধবার (২২ অক্টোবর) ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের বাধায় ১২বারের মতো আটকে যায় বিলটি। বিল পাসে ৬০ ভোটের প্রয়োজন। কিন্তু পক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ৫৪টি। আর বিপক্ষে ৪৬টি।
এতে আরও দীর্ঘ হচ্ছে সরকারের অচলাবস্থা। বেতন ছাড়াই চাকরি করতে হচ্ছে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের সাড়ে সাত লাখ কর্মীকে। তহবিলের অভাবে সংকটের মুখে স্বাস্থ্যসেবা, বিমান পরিবহনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সরকারের বেশকিছু পর্যটন ও বিনোদন স্পট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় ঋণ রেকর্ড ৩৮ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নাগরিকদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ডলারে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্ক আরোপে এরইমধ্যে সংকটের মুখে বহু দেশ। তবে এর প্রভাব থেকে যুক্তরাষ্ট্রও বের হতে পারছে না। দিন দিন দেশটির ঘাড়ে চাপছে ঋণের বোঝা।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি সরকারি ব্যয় ও রাজস্বের মধ্যে সামঞ্জস্য করতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দেশটির জাতীয় ঋণ ১ ট্রিলিয়ন বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে এ ঋণের পরিমাণ ছিলো ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: