প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মাদক চোরাচালানকারীদের হত্যার অজুহাতে ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ভেনেজুয়েলার মাদক চোরাচালানকারীদের ওপর তার প্রশাসন যে হামলা চালাচ্ছে শিগগির তা আরও বিস্তৃত হতে পারে। এমনকি ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডেও হামলা শুরু হতে পারে।
ভেনেজুয়েলার যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জল্পনার মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রেসিডেন্ট।
ভেনেজুয়েলার চারপাশে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। সেই সঙ্গে মাদক চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ক্যারিবীয় সাগরে নয়টি নৌযান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী। এসব হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব নৌযান ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছে এবং দেশচির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ‘মাদক-সন্ত্রাসী হুমকি’র অংশ।
ভেনেজুয়েলা ঘিরে সামরিক উপস্থিতি জোরদার ও নৌযানে ধারাবাহিক হামলার ঘটনাগুলো থেকে অনেকেই মনে করছেন, খুব শিগগিরই ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিকে সামরিক আগ্রাসন চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী। এদিকে এ ঘটনায় ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
এমন উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ভেনেজুয়েলায় স্থলভাগে হামলার ইঙ্গিত দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস সভাসদদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এবার পরবর্তী লক্ষ্য হবে (ভেনেজুয়েলার) ভূখণ্ড। তিনি আরও বলেন, ‘মাদক চোরাচালানকারীদের ওপর হামলার জন্য যুদ্ধ ঘোষণার দরকার নেই। তবে অভিযানের ব্যাপারে কংগ্রেসকে জানানো হবে।
‘আমি মনে করি আমরা কেবল সেইসব লোকদের হত্যা করব যারা আমাদের দেশে মাদক আনছে। ঠিক আছে? আমরা তাদের হত্যা করব,’ ট্রাম্প বলেন। ‘এখন এগুলো [মাদক] স্থলপথে আসছে... আপনি জানেন, পরবর্তী লক্ষ্য হবে (ভেনেজুয়েলার) স্থল।’
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদন নাকচ করে দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ভেনেজুয়েলার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী বি-১ বোমারু বিমান উড়িছিল। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো বোমারু বিমান মোতায়েন করিনি, তবে খুব শিগগির ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান হতে পারে।’
বিশ্লেষকরা অনুমান করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের মাদকবিরোধী প্রচেষ্টা আসলে ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার একটি অজুহাত, যাকে ট্রাম্প ‘মাদক-সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছেন। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা এমনকি ট্রাম্পের কিছু প্রভাবশালী সমর্থকও ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সামরিক হামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
যেমন অ্যারিজোনার ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি বৃহস্পতিবার এমএসএনবিসি-তে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখন আমরা ভেনেজুয়েলার উপকূলে বি-৫২ উড়াচ্ছি। সেখানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলছি?’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এতবার ঘনঘন শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি লাভ বয়ে এনেছে, তা সে ভিয়েতনাম, কিউবা, ইরাক বা আফগানিস্তানেই যেখানেই হোক না কেন? এটা আমেরিকানদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এটা আমাদের নিরাপদ করছে না। বরং বিপরীত প্রভাব পড়ছে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: