এইচ-১বি ভিসার জন্য ১০০০,০০০ ডলার ফি আরোপ করলেন ট্রাম্প

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৭

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী আনতে (এইচ-১বি ভিসায়) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে বছরে ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন গতকাল শুক্রবার ভিসা–সংক্রান্ত নতুন এ নীতিমালা ঘোষণা করেছে। এ–সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই ঘোষণা প্রযুক্তি খাতের জন্য বড় একটি ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে। দেশটির প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো দারুণভাবে ভারতীয় ও চীনা কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেন। শুধু অবৈধ অভিবাসন দমন নয়, বৈধ অভিবাসন সীমিত করার লক্ষ্যেও নানা ধরনে উদ্যোগ নিচ্ছে তাঁর প্রশাসন।

এইচ-১বি ভিসা ইস্যুর প্রক্রিয়া নতুন করে ঘোষণার এ পদক্ষেপটি এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ী কর্মী ভিসা প্রদান–সংক্রান্ত নীতিমালায় ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় হস্তক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘আপনি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে চাইলে আমাদের দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি স্নাতক হওয়া একজনকে প্রশিক্ষণ দিন। দের প্রশিক্ষণ দিন। আমাদের চাকরি কেড়ে নিতে বিদেশ থেকে লোকজন আনা বন্ধ করুন।’

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় এইচ-১বি ভিসায় কড়াকড়ি আরোপের বার্তা দিয়েছিলেন। তাঁর ওই হুঁশিয়ারি প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তবে একই সঙ্গে এই বার্তা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ট্রাম্প শিবিরে কোটি কোটি ডলার অনুদান এনে দিয়েছিল।

এইচ-১বি ভিসা প্রকল্পের সমালোচকদের যুক্তি, এই এইচ–১বি ভিসা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মীদের কম মজুরি দেওয়ার এবং দের মধ্যে যাঁরা কাজগুলো করতে পারতেন, তাঁদের উপেক্ষা করার সুযোগ করে দেয়। সমালোচকদের এই তালিকায় অনেক প্রযুক্তিকর্মীও রয়েছেন।

অন্যদিকে যাঁরা এইচ-১বি ভিসার পক্ষে তাঁদের যুক্তি, এই ভিসা প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতার ঘাটতি পূরণ করতে অত্যন্ত দক্ষ কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে এটা প্রয়োজন।

ট্রাম্পের একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র টেসলা সিইও ইলন মাস্ক এইচ-১বি ভিসার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। তিনি পরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন।

গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প তাঁর নির্বাহী আদেশে বলেছেন, কিছু নিয়োগকর্তা এই প্রকল্পটি ব্যবহার করে মজুরি কমিয়ে কর্মীদের অসুবিধায় ফেলেছেন।

ওই নির্বাহী আদেশে আরও বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এগুলোকে সংক্ষেপে এসটিইএম বলে) ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২৫ লাখে পৌঁছেছে। অথচ একই সময়ে এসটিইএম ক্ষেত্রে মোট কর্মসংস্থান মাত্র ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ডিডি দাস বলেন, নতুন ফি যোগ করার কারণে বিশ্বের সেরা প্রতিভাধরদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগ্রহ কমে যাবে।

ডিডি দাস আরও বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র সেরা প্রতিভাধরদের আকৃষ্ট করা বন্ধ করে, তবে দেশের উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সক্ষমতা নাটকীয়ভাবে কমে যাবে।’

এ ছাড়া এই পদক্ষেপের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোটি কোটি ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হতে পারে। বিশেষ করে ছোট ছোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপগুলোর জন্য এটি কঠিন হতে পারে।

এই ভিসা ফি কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বাণিজ্যমন্ত্রী লুটনিক বলেছেন, প্রতিবার তিন বছর মেয়াদি এ ভিসার জন্য প্রতিবছর ১ লাখ ডলার করে ফি দিতে হবে।

বাকি বিষয়গুলো এখনো বিবেচনাধীন বলেও জানিয়েছেন লুটনিক।

কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করছেন, ফি আরোপের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উচ্চমানের কিছু কাজ দেশের ভেতর না করিয়ে বিদেশ থেকে করিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে চীনের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন নিয়ে যে প্রতিযোগিতা তাতে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে।

ইমার্কেটার বিশ্লেষক জেরেমি গোল্ডম্যান বলেন, ‘এই পদক্ষেপ অল্প সময়ের জন্য ওয়াশিংটনকে বড় অঙ্কে অর্থ এনে দিতে পারে। তবে দীর্ঘ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্ভাবনী সক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: