ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৯ জুন ২০২৫ ২২:৫১

ফাইল ছবি ফাইল ছবি
ক্যালিফোর্নিয়া পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। অভিবাসন ইস্যুতে সৃষ্ট অস্থিরতা দমাতে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসম বলেছেন, তার এমন পদক্ষেপের কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করছেন। ওদিকে তৃতীয় দিনশেষে রাতভর বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত ছিল বলেই মনে হয়েছে। মেয়র ক্যারেন ব্যাস তাদেরকে সহিংসতা ও বিশৃংখলা এড়িয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ফেরার পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট লস অ্যানজেলেসে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে এক লাখ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। 
 
অনলাইন বিবিসি এ খবর দিয়ে বলছে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, লস অ্যানজেলেসে চলমান অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে সেখানে নৌ সেনা মোতায়েন করা হতে পারে। এই ঘোষণার পর অনেকেই এ ধরনের পদক্ষেপের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই হুমকিকে ‘উন্মাদের আচরণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসে এটি নতুন কিছু নয়। এর আগে ১৯৯২ সালের মে মাসে লস অ্যানজেলেসে রডনি কিং নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধরের মামলায় চার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার বেকসুর খালাসের প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গার সময়ও প্রায় ১,৫০০ মেরিন সেনা সেখানে মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। তিনি ইনসারেকশন অ্যাক্ট নামের একটি আইনি কাঠামো ব্যবহার করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন।
 
 
ইনসারেকশন অ্যাক্ট কী?
 
ইনসারেকশন অ্যাক্ট হলো ১৮০৭ সালের একটি মার্কিন আইন, যা প্রেসিডেন্টকে জরুরি পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ক্ষমতা দিয়েছে। মূলত যখন কোনো অস্থিরতা বা সহিংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যা স্থানীয় বা রাজ্য সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন এই আইনের মাধ্যমে ফেডারেল সেনা মোতায়েন করা যায়। ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস-এর মতে, গত অর্ধশতাব্দীতে এই আইনের অধীনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘটনা খুবই বিরল। তবে আইনের ভাষা অস্পষ্ট হওয়ায়, এটি প্রেসিডেন্টকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে— তিনি নিজের বিবেচনায় নির্ধারণ করতে পারেন কখন এবং কোথায় এই আইন প্রয়োগ করা হবে।
 
তবে বিতর্ক কেন?
অনেকেই মনে করছেন, লস অ্যানজেলেসের পরিস্থিতি এখনো এতটা গুরুতর নয় যে সেখানে ফেডারেল সেনাবাহিনী প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনসারেকশন অ্যাক্ট ব্যবহার করার আগে প্রমাণ করতে হবে যে রাজ্য বা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু যদি প্রেসিডেন্ট এই আইন প্রয়োগে একতরফা সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। আর এই সুযোগটাই ব্যবহার করছেন গ্যাভিন নিউসম। তাই তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম নিশ্চিত করেছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন। এক্সে পোস্ট করে নিউসম বলেন— এটাই ছিল ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্য। তিনি আগুনে ঘি ঢেলেছেন এবং বেআইনিভাবে ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। তিনি যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তা শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার জন্য নয়— এটি যেকোনো রাজ্যে একইভাবে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করছি। তিনি আরও বলেন, এটি সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ এবং আমরা আদালতে সেই দাবির সত্যতা পরীক্ষা করব।
 
নিউসমের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্রের অভিযোগ
তবে নিউজমের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। এক্সে পোস্ট করে তিনি বলেন, গ্যাভিন নিউজম দুর্বল। যখন সরকারি কর্মকর্তারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন তখন এবং দাঙ্গার সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। লেভিটের ভাষায়, লস অ্যানজেলেসে দিনের পর দিন সহিংস দাঙ্গা চলেছে এবং গভর্নর নিউজম কিছুই করেননি। ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ‘সহিংস উগ্রবাদী’ ও ‘অবৈধ অপরাধীদের’ আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। অথচ গভর্নর এতটাই দুর্বল ছিলেন যে শহরটিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। তিনি আরও বলেন, লস অ্যানজেলেস পুলিশ প্রধান নিজেও স্বীকার করেছেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল।
 
রাজনীতির তীব্র দ্বন্দ্ব
এই মন্তব্যগুলো এমন সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে মামলা করছেন গভর্নর নিউসম। নিউসমের মতে, সেনা মোতায়েন তার অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থী। তবে হোয়াইট হাউজের দাবি, রাজ্য সরকার যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তখন ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করতেই পারে। প্রেস সেক্রেটারি লেভিটের মন্তব্য সেই অবস্থানকেই জোরদার করেছে।
 
জনমত বিভক্ত
জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। একদিকে অনেকে মনে করছেন, ফেডারেল হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে অনেকেই বলছেন, এটি রাজ্য স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ এবং একটি বিপজ্জনক নজির।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: