
বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক স্থগিত করেছেন ফেডারেল আদালত। বুধবার নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত এক আদেশে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান। আদেশে আদালত সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে আইন-বহির্ভূত কাজ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি গত ২রা এপ্রিল বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের ওপর ওই শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এতে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে এক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যেই এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক এক আদালত বলেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তার যে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, তার বাইরে গিয়ে তিনি কাজ করেছেন।
এর অর্থ কংগ্রেসে তিনি এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। এককভাবেই ওই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের কাঁধেও চাপানো হয় অতিরিক্ত শতকরা ৩৭ ভাগ শুল্ক। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার আবেদন করেন। এরপরই ট্রাম্প তিন মাসের জন্য পুরো শুল্ক স্থগিত করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে আইনি লড়াই চলতে থাকে।
সর্বশেষ বুধবার আদালত ওই আদেশ দেয়ার পর হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চলেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দেশে জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা কী করে করতে হবে, তা অনির্বাচিত বিচারকরা স্থির করে দিতে পারেন না। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুশ দেশাই যে জরুরি পরিস্থিতির কথা বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে শুল্কনীতি বহাল রাখার পক্ষে বক্তব্য রেখেছে প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে তারা ১৯৭৭ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট’কেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
কিন্তু আদালতের তিন বিচারক জানিয়ে দেন, আপৎকালীন এই আইনও প্রেসিডেন্টকে অন্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ করে আমেরিকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার চূড়ান্ত ক্ষমতা দেয় না। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই আইন জরুরি অবস্থায় প্রেসিডেন্টকে কেবল কিছু প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দিয়েছে। এর অতিরিক্ত কিছু নয়।
গত ২রা এপ্রিল বিভিন্ন দেশের উপর ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপ করার সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যে দেশ আমেরিকার পণ্যের উপর যত পরিমাণ শুল্ক চাপায়, ঠিক তত পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হবে সংশ্লিষ্ট দেশের রফতানি করা পণ্যে। আমেরিকায় রফতানি করা সমস্ত পণ্যে ১০ শতাংশ বুনিয়াদি কর চাপানো হয়। তা ছাড়া যে দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেই দেশের পণ্যে চড়া আমদানি শুল্ক চাপে।
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি ছিল, এর ফলে আমেরিকার স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ভারতের উপরেও চাপানো হয় ২৬ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। তার পর এই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন প্রেসিডেন্ট। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্কনীতির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দিয়েছিল আমদানি করা পণ্যের উপর নির্ভরশীল আমেরিকার বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। শেষমেশ আদালত ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিপক্ষেই রায় দিলেন। তিন বিচারক জানিয়েছেন, ওই নীতির আইনগত দিক পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
আদালতের এই রায়ের পরেই চাঙ্গা হয়েছে ডলার। বুধবার তার মুদ্রামান ইউরো, ইয়েন এবং সুইস ফ্রাঙ্ককে ছাপিয়ে গিয়েছে। সে দেশের শেয়ার বাজারেও ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখা গেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: