
রমাদান মাসের পবিত্রতা ও গুরুত্বকে স্বীকৃতি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক জাঁকজমকপূর্ণ ইফতার-নৈশভোজের আয়োজন করেন বৃস্পতিবার। এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট মুসলিম-আমেরিকান নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা অংশ নেন।
এই আয়োজন প্রেসিডেন্টের মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মাননা ও উদযাপনের এই রাতে বিলাসবহুলভাবে সজ্জিত হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘রমজান মুবারক’ এবং শুরুতেই সারা বিশ্বের মুসলমানদের সিয়াম ও আত্মিক চিন্তার এই মাস রমজানের শুভেচ্ছা জানান।
প্রেসিডেন্ট তার নির্বাচনী বিজয়ে মুসলিম আমেরিকানদের ক্রমবর্ধমান সমর্থনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের রেকর্ডসংখ্যক ভোট প্রদানের কথা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি হাজার হাজার মুসলিম আমেরিকানদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমাদের ২০২৪ সালের নির্বাচনে অবিশ্বাস্যভাবে সমর্থন দিয়েছেন।’
বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা, শিক্ষা নীতির সংস্কার এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা জ্বালানির দাম কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি, এমনকি ডিমের দামও পঞ্চাশ শতাংশ কমিয়েছি।’
এছাড়া, তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অধিকার এবং মহিলা ক্রীড়ায় ট্রান্সজেন্ডার অংশগ্রহণ নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন, যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকের মধ্যে সাড়া ফেলে। তিনি বলেন, ‘নভেম্বরে মুসলিম সম্প্রদায় আমাদের পাশে ছিল, আমি প্রেসিডেন্ট থাকা পর্যন্ত আমি আপনাদের পাশে থাকব।’
মধ্যপ্রাচ্যে তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ চান, যা বাইডেন প্রশাসনের অধীনে স্থবির হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা চারটি দেশকে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম, এরপর আর কিছুই হয়নি। তবে আমার মনে হয় এটি খুব শিগগিরই বদলে যাবে।’
এই মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রভাবশালী মুসলিম-আমেরিকান নেতা এবং বিভিন্ন ইসলামী দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, তুলসি গ্যাবার্ড- জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক, ক্রিস ল্যান্ডাল- উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী, মর্গান ওরতাগাস- ডেপুটি স্পেশাল এনভয়, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম, কংগ্রেসম্যান আবে হামাদেহ, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আলিনা হাব্বা, হোয়াইট হাউস প্যাস্টর পলা হোয়াইট, হোয়াইট হাউসের ধর্ম বিষয়ক দপ্তরের পরিচালক ম্যাড বুলোস মোসাদ, প্রমুখ।
এ ছাড়া মিশিগানের মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হ্যামট্রামিকের মেয়র আমের গালিব, ডিয়ারবর্ন হাইটসের মেয়র বিল বাজ্জি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই অনুষ্ঠানে আরও ঘোষণা করেন যে, আমের গালিব আগামীতে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং মেয়র বিল বাজ্জি তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রিমা সহ সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, মিসর, কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, বাহরাইন, ইরাক, ওমান, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, জিবুতি, ক্যামেরুন, লেবানন, নাইজেরিয়া, গিনি, তানজানিয়া, কেনিয়া, মালদ্বীপ, লিবিয়া, সেনেগাল এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যের শেষে শান্তি, কৃতজ্ঞতা ও ধর্মীয় নিষ্ঠার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি মিশিগানের মুসলিম নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনার একটি বিশেষ মুহূর্ত স্মরণ করেন। যেখানে তারা বলেন, ‘স্যার, আমরা কেবল শান্তি চাই।’ এরপর উপস্থিত সবাই ঐতিহ্যবাহী ইফতারের মাধ্যমে রোজা ভাঙেন এবং বিশ্বাস, নীতি ও মার্কিন-মুসলিম সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন।
মুসলিম-আমেরিকান নেতাদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ও কূটনৈতিক পদে মুসলিম ব্যক্তিদের নিয়োগের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অন্তর্ভুক্তি ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের জন্য হোয়াইট হাউসে একজন ব্যক্তি আছেন, যিনি আপনাদের ভালোবাসেন।’
উল্লেখ্য, এই ইফতার পার্টি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকা জুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দমননীতি আরও তীব্র করেছেন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হয় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট গ্রেপ্তার করেছে অথবা তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। কমপক্ষে আটজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক, যাদের সবারই গ্রিনকার্ড বা শিক্ষার্থী ভিসা ছিল, তারা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
এটি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে, কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন যে, পররাষ্ট্র দপ্তর কমপক্ষে ৩০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। ফেডারেল সরকার একটি অপ্রচলিত আইন ব্যবহার করছে, যেখানে বলা হয়েছে যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কোনো অ-নাগরিককে বহিষ্কার করতে পারেন, যিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে শুধুমাত্র একজন অভিবাসন বিচারকই কারও গ্রিন কার্ড বাতিল করতে পারেন। এই আইনের ব্যবহার বর্তমানে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: