‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫৬

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সরকার সেখানে অবৈধভাবে অবস্থান করা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে। দেশটিতে ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিও আছে বলে অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের। এই অভিযোগে বাংলাদেশের নাগরিকদেরও ফেরত পাঠানো শুরু করছে তারা।

কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে অবস্থানের অনুমতি ও কাগজপত্র না থাকায় এরই মধ্যে বাংলাদেশের ৪০০-৫০০ নাগরিককে ফেরত পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করেছে দেশটির সরকার। সেখানে প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিতে ব্যর্থ হলে তাদের সবাইকে দেশে ফিরতে হতে পারে।

ফেরত আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে ঢাকায় দুই দফা বৈঠক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত বুধবারের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকালের বৈঠকে অংশ নেন পুলিশের বিশেষ শাখা, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

দুটি বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে পড়া ব্যক্তিদের ঢাকায় পাঠাতে শুরু করেছে। গড়ে সপ্তাহে ৬-৭ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দেশে অবস্থানের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা না থাকার কারণে অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিককে গ্রহণের বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সব দেশের জন্য প্রযোজ্য।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিকদের ফেরত নিতে অসম্মতি জানালে যারা বৈধ উপায়ে বিভিন্ন কাজে বা ভ্রমণে বিদেশে যান, তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এটি হতে দেওয়া যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া অনেক ভারতীয় নাগরিককে সরকার হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠিয়েছে। এ বিষয়টির উল্লেখ করে বাংলাদেশের নাগরিকদের কীভাবে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ফেরত পাঠানোর জন্য চিহ্নিত ব্যক্তির বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট থাকলে তাকে সরাসরি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে ফেরত আসা ব্যক্তির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক বা একাধিক নিরাপত্তা কর্মী একই ফ্লাইটে আসছেন, এমনটিও ঘটছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কোনো ব্যক্তির বৈধ পাসপোর্ট না থাকলে তার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মিশনকে সরকারিভাবে জানানো হয়। সে ক্ষেত্রে মিশন প্রথমে যাচাই করে দেখে যে, ওই ব্যক্তি আসলেই বাংলাদেশের নাগরিক কি না। যাচাইয়ে বাংলাদেশের নাগরিক প্রমাণ হলে তাঁর জন্য এককালীন ভ্রমণের পারমিট (টিপি-ট্রাভেল পারমিট) দেওয়া হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তাঁকে পাঠিয়ে দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাদের ঢাকায় বিমানবন্দরে গ্রহণ করে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে সরকার সহযোগিতা করবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প প্রশাসন গত ২০ জানুয়ারি অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে আসেন, তবে ভারতীয় অভিবাসীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য, এবং তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সামরিক প্লেন ব্যবহারের কার্যক্রম স্থগিত করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ হিসেবে উচ্চ ব্যয় ও অদক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবশেষ ফ্লাইটটি গত ১ মার্চ পরিচালিত হয়। এরপর নতুন করে আর কোনও ফ্লাইট নির্ধারিত হয়নি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে এই সামরিক প্লেন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মূলত প্রশাসনের অভিবাসন দমন কার্যক্রমের কঠোর বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: