দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেই যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুদিন আগে তিনি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার হুমকি এবং ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তারও আগে তিনি কা

আবারও কানাডাকে অঙ্গরাজ্য করার প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১২:২১

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেই যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুদিন আগে তিনি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার হুমকি এবং ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তারও আগে তিনি কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উপস্থিতিতে তাঁর দেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একীভূত হয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ট্রাম্প আবারও সেই একই প্রস্তাব দিয়েছেন গতকাল সোমবার।

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্তির প্রস্তাব দেন।

ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘অনেক কানাডীয় (যুক্তরাষ্ট্রের) ৫১ তম রাজ্য হওয়ার বিষয়টি পছন্দ করে। যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডার বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভর্তুকি সহ্য করতে পারছে না—কিন্তু এগুলো আবার কানাডার টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন। জাস্টিন ট্রুডো এটি জানতেন এবং তিনি পদত্যাগ করেছেন।’

সোমবার সকালে ট্রুডো তাঁর দলের ভেতরে বেড়ে চলা অসন্তোষ এবং জনসমর্থনের নিম্নমুখী রেকর্ডের কারণে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এতে তাঁর নেতৃত্বে পরবর্তী নির্বাচনে শক্তিশালী কনজারভেটিভ বিরোধীদের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বড় ধরনের সন্দেহ তৈরি করেছে।

কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক সম্পর্কের সমস্যাগুলো তুলে ধরে ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও বলেন, ‘কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে কোনো শুল্ক থাকবে না, কর ব্যাপকভাবে কমে যাবে এবং তারা পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবে রাশিয়া এবং চীনা জাহাজের হুমকি থেকে। কারণ, এগুলো সব সময় তাদের ঘিরে রাখে।’ এ সময় তিনি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র মিলে একটি মহান জাতি হতে পারে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কী মহান একটি জাতি এটি হতে পারে!!!’

এর আগে, গত নভেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, কানাডা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১ তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতে পারে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বাসভবন মার-এ-লাগোতে এলে এ কথা বলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প জাস্টিন ট্রুডোকে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত শুল্কও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অভিবাসন সমস্যা সমাধান না করে কানাডার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলে, তাহলে কানাডার উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১ তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া।

ট্রাম্প কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর কোনো পূর্বাভাস না দিয়েই ট্রুডো ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে বৈঠক করেন দুই নেতা। ট্রাম্প এই আলোচনাকে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেন। শুল্ক, সীমান্ত নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়গুলোই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

ট্রাম্প-ট্রুডোর আলোচনার টেবিলে উপস্থিত দুই ব্যক্তির মতে, ট্রাম্প ট্রুডোকে স্বাগত জানালেও কানাডার প্রতি তিনি খুবই কঠোর ও স্পষ্টভাষী ছিলেন। আলোচনার সময় ট্রাম্প ট্রুডোকে বলেন, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। ৭০ টিরও বেশি দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী এবং বিপুল পরিমাণ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।

সূত্রমতে, যখন ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গ তোলেন, তখন তিনি আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি দাবি করেন, এই ঘাটতি ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ট্রাম্প ট্রুডোকে বলেন, যদি কানাডা সীমান্ত সমস্যা ও বাণিজ্য ঘাটতি সমাধান করতে না পারে, তবে তিনি প্রথম দিনেই কানাডার সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন।

ট্রুডো ট্রাম্পকে জানান, এই শুল্ক আরোপ করলে কানাডার অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে কি আপনি বলতে চাইছেন যে, আপনার দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ১০০ বিলিয়ন ডলার না ঠকালে বাঁচতে পারবে না?’ এরপরই ট্রাম্প ট্রুডোকে প্রস্তাব দেন, কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১ তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যায়, তাহলে কেমন হবে? এই মন্তব্যে ট্রুডো ও অন্যরা হাসলেও তাদের মুখভঙ্গি ছিল খুবই আড়ষ্ট।

পরে ডিসেম্বরেরে দ্বিতীয় সপ্তাহে ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে বিদ্রূপ করে ‘কানাডা প্রদেশের গভর্নর’ বলে উল্লেখ করেন। ট্রুথ পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘মহৎ কানাডা প্রদেশের গভর্নর জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ডিনার করে দারুণ সময় কাটালাম। আমি গভর্নরের সঙ্গে আবার দেখা করার জন্য উন্মুখ, যাতে আমরা শুল্ক এবং বাণিজ্য নিয়ে গভীর আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি। যার ফলাফল হবে সবার জন্য অসাধারণ!’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: