যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের রিপাবলিকান পার্টির সাবেক সদস্য ম্যাট গেটজ যৌনতা ও মাদকের পেছনে হাজার হাজার ডলার খরচ করেছেন। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নৈতিকতাবিষয়ক কমিটির এক দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কংগ্রেস সদস্য থাকা অবস্থায়ই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পেছনে এ বিপুল অঙ্কের অর্থ ঢেলেছেন ম্যাট গেটজ (৪২)।
যৌন অনাচার ও অবৈধ মাদক কারবারের অভিযোগে গেটজের বিরুদ্ধে বছরব্যাপী তদন্ত চলার পর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করল কমিটি। নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেতার পর গেটজকে তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা হিসেবে বাছাই করেছিলেন।
সাবেক এই আইনপ্রণেতা অবশ্য বারবারই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছিলেন। দাবি করছিলেন, তিনি অপপ্রচারের শিকার। বিতর্কের মুখে একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ট্রাম্পের মনোনয়ন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন গেটজ।
তদন্তে কমিটি আরও দেখেছে, ২০১৮ সালে বাহামায় একটি সফর–সংক্রান্ত বিষয়ে অনুমোদিত অঙ্কের বেশি উপহার গ্রহণ করেছিলেন ম্যাট গেটজ।
সাবেক এই আইনপ্রণেতা অবশ্য বারবারই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছিলেন। দাবি করছিলেন, তিনি অপপ্রচারের শিকার। বিতর্কের মুখে একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ট্রাম্পের মনোনয়ন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন গেটজ।
কংগ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গেটজের বিরুদ্ধে এ পরিষদের নিয়মকানুন ভঙ্গ করা এবং যৌনবৃত্তি, অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে ধর্ষণ, অবৈধ মাদকের ব্যবহার, অননুমোদিত উপহার গ্রহণ, বিশেষ আনুকূল্য বা সুবিধা আদায় ও কংগ্রেসের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পক্ষে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১২ জন নারীর পেছনে ৯০ হাজার ডলার উড়িয়েছেন গেটজ। কমিটি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে তিনি এ অর্থ শুধু যৌনতা বা যৌনতা ও মাদক বাবদ খরচ করেছেন।
এর বাইরে তদন্তে আরও দেখা গেছে, গেটজ ২০১৭ সালে একটি পার্টিতে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন। বিনিময়ে কিশোরীকে ৪০০ ডলার দেন তিনি। শারীরিক সম্পর্ক করলে এ অর্থ দেওয়া হবে, বিষয়টি আগেই জেনেছিল মেয়েটি।
তবে ম্যাট গেটজ কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার এ অভিযোগ নাকচ করে দেন। মার্কিন বিচার বিভাগ গেটজের বিরুদ্ধে আরেক কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগে ফৌজদারি অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়নি।
এ প্রতিবেদন যাতে প্রকাশ না হয়, সে লক্ষ্যে গেটজ গতকাল আদালতে শেষমুহূর্তে একটি আবেদন দাখিল করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, নৈতিকতাবিষয়ক কমিটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়ে ক্ষমতা খাটানোর চেষ্টা করছে।
কমিটি এর ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে গেটজকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগও করেছে। কমিটি বলেছে, তাঁর অনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন প্রকাশিত না হয়, সে জন্য বারবার তদন্ত প্যানেলকে লক্ষ্যচ্যুত, বাধাপ্রদান বা বিভ্রান্ত করেছেন তিনি।
এ ছাড়া কমিটির সামনে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হলেও, গেটজ কখনো তা করেননি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
ফ্লোরিডা থেকে ২০১৬ সালে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ম্যাট গেটজ। সেই বছরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত গেটজ। তিনি ২০২১ সালে বিবাহ করেন। গেটজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও তাঁর বর্তমান স্ত্রী জিনজার তাঁকে নিয়মিত সমর্থন করে গেছেন।
কংগ্রেস থেকে গত মাসে পদত্যাগ করেন ম্যাট গেটজ। এ অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের একান্ত অনুগত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ভবিষ্যৎ প্রশাসন সাজানো শুরু করেন। তাঁর এ প্রশাসনের অনেকের বিরুদ্ধেই নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গেটজও ছিলেন তাঁর পছন্দের একজন ব্যক্তি। তবে তুমুল বিতর্কের মুখে গেটজ নিজেকে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে নেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের মনোনয়ন থেকে গেটজ সরে যাওয়ার পর ফ্লোরিডার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছেন ট্রাম্প। এখন গেটজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের বিষয়ে তাঁর (ট্রাম্প) কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: