বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের সন্তান হান্টার বাইডেনকে নিঃশর্ত ক্ষমা ঘোষণা করার ১১ দিন পর এক দিনে সাজা মওকুফের রেকর্ড গড়লেন। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক দিনে এর আগে বাইডেন কখনো এত ব্যক্তির সাজা মওকুফ করেননি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে তিনি আরও উদ্যোগ নেবেন। তাঁর প্রশাসন সাজা মওকুফের আরও আবেদন পর্যালোচনা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেন, হান্টারকে ক্ষমা ঘোষণার পর গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় সাজা পাওয়া অনেকেই বাইডেনের কাছে এ ধরনের ক্ষমা পাওয়ার দাবি জানান। হোয়াইট হাউস তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেয়।
করোনা মহামারির সময় যাঁদের গৃহবন্দী রাখা হয়েছিল, এমন অনেককেই আজ ক্ষমা করা হয়েছে। বাইডেন বলেন, এখনকার আইন, নীতি ও চর্চার অধীন যদি এসব ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হতো, তবে তাঁরা আরও কম শাস্তি পেতেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অহিংস মাদক গ্রহণের অপরাধ ও নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলোর চোখে যাঁরা অন্যায়ভাবে বন্দী ছিলেন, তাঁদের ক্ষমার বিষয়টি আলোচনায় ছিল।
বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি অহিংস অপরাধী ও মাদক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাজা কমিয়েছেন এবং মওকুফ করেছেন। যাঁরা অনুশোচনা ও পুনর্বাসিত হওয়ার ইচ্ছা দেখিয়েছেন, তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের দৈনন্দিন জীবনে অংশগ্রহণ ও সম্প্রদায়ের প্রতি অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রথম দিনেই ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রে আরও অনেক ব্যক্তির সাজা মওকুফের আশা করা যাচ্ছে।
১ ডিসেম্বর ছেলে হান্টারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করেন জো বাইডেন। হান্টারের সাজার ঘটনাকে তিনি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে আদালতের ব্যর্থতা বলেও মন্তব্য করেন।
দুটি ফৌজদারি অপরাধে হান্টার বাইডেনের কারাদণ্ড হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে কর ফাঁকির মামলায় হান্টার বাইডেনের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া বন্দুক-সংক্রান্ত আলাদা মামলায় তাঁর ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘হান্টারের মামলার তথ্য যাচাই করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, শুধু আমার ছেলে হওয়ার কারণে তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। আর এটা ভুল।’
তবে সমালোচকেরা বলছে, বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। এমন সময়ে এ ঘটনা ঘটল, যখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) প্রধানকে নিজেই মনোনীত করেছেন। তাছাড়া বিচার বিভাগেও তিনি নিজেই নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের এমন ক্ষমা প্রদর্শনের উদাহরণ রয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কোকেন-সংক্রান্ত মামলায় তাঁর সৎভাইকে ক্ষমা করেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাঁর আগের মেয়াদে কর ফাঁকির মামলায় বেয়াইকে ক্ষমা করেন। তাঁরা সবাই কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: